You dont have javascript enabled! Please enable it! রত্নাই ব্রিজ বধ্যভূমি (লালমনিরহাট সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

রত্নাই ব্রিজ বধ্যভূমি (লালমনিরহাট সদর)

রত্নাই ব্রিজ বধ্যভূমি (লালমনিরহাট সদর) লালমনিরহাট সদর উপজেলার কর্ণপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া রত্নাই নদীর ওপর রত্নাই ব্রিজ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় লালমনিরহাট থেকে মোঘলহাট পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করত। বর্তমানে রেলপথটি অচল। এ রেলপথের একটি স্থানের নাম কর্ণপুর। মুক্তিযুদ্ধের সময় রত্নাই রেল ব্রিজের নিচে এবং এর আশপাশের গ্রামে ব্যাপক গণহত্যার ঘটনা ঘটে। ব্রিজের দখল নিতে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনী-র কয়েক দফা যুদ্ধ হয়।
রত্নাই রেল ব্রিজের দক্ষিণ দিকের পূর্ব ও পশ্চিমে পাকিস্তানি সেনাদের দুটি ক্যাম্প ছিল। তারা ব্রিজ পাহারা দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ধরে এনে নির্যাতন করার পর হত্যা করত। পাকিস্তানি সেনারা ব্রিজের নিচে এবং চতুর্দিকের অর্ধ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কয়েক শত মানুষকে হত্যা করে। নিহতদের লাশ দিনের পর দিন ব্রিজের নিচে, নদীর ধারে ও ব্রিজের আশপাশে পড়ে থাকত। অনেক লাশ পচে-গলে নষ্ট হয়ে শিয়াল-কুকুরের খাদ্যে পরিণত হতো। কর্ণপুর গ্রামের হাসেন আলী (৭৫) (পিতা মোহাম্মদ আলী) জানান, রত্নাই ব্রিজে ক্যাম্প স্থাপন করে পাকিস্তানি সেনারা নির্যাতন ও গণহত্যা চালিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ফলে কর্ণপুরসহ আশপাশের গ্রাম থেকে লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়।
নভেম্বর মাসের শেষের দিকে মুক্তিবাহিনী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে এবং ব্রিজটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করে। এ-সময় দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়৷ শেষ পর্যন্ত ব্রিজের দখল ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়ে পাকিস্তানি সেনারা বোমা মেরে ব্রিজটি উড়িয়ে দেয় এবং লালমনিরহাটের দিকে সরে যায়। ফলে কর্ণপুর গ্রাম পুরোপরি মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে এবং গ্রামবাসী ঘরবাড়িতে ফিরে আসতে থাকে। এ-সময় তারা বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা লাশ ও কংকালসমূহ গর্ত করে মাটিচাপা দেয়।
বর্তমানে এ রেলপথের ব্যবহার নেই। ব্রিজটিও এখন ট্রেন চলাচলের উপযোগী নেই। ব্রিজটির ওপর সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে ভ্যান ও পথচারী চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড