You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ ‘রক্তধারা’

রক্তধারা (চাঁদপুর সদর) মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ। এটি চাঁদপুর সদর উপজেলায় অবস্থিত।
৮ই এপ্রিল সন্ধ্যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চাঁদপুরে শহরে অনুপ্রবেশ করে প্রথমে টেকনিক্যাল উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্যাম্প স্থাপন করে। পরের দিন তারা বড় স্টেশনের রেলওয়ে বিশ্রামাগার, রেলওয়ে থানা ও রেলওয়ে ডাকবাংলো দখল করে স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপন করে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই তারা নূরিয়া হাইস্কুল, আক্কাস আলী হাইস্কুল, বে শিপিং কর্পোরেশন, ওয়াপদা রেস্ট হাউস, পুরান বাজার পুলিশ ফাঁড়ি “এবং পৌরসভার দাতব্য চিকিৎসালয়ে ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযুদ্ধকালে চাঁদপুরকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩৯তম ডিভিশনের হেডকোয়ার্টার্স ঘোষণা করা হয়। এর অধিনায়ক ছিল মেজর জেনারেল রহিম খান। মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় বড় স্টেশন, পুরান বাজার ও নূরিয়া হাইস্কুল ক্যাম্পে তারা কয়েকটি নির্যাতনকেন্দ্র স্থাপন করে। হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার ও রেলগাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনে যারা চঁদপুর আসত, সন্দেহ হলে তাদের এবং জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে স্বাধীনতার পক্ষের লোকজন ও নারীদের এ নির্যাতনকেন্দ্রে নিয়ে এসে অমানুষিক নির্যাতন করে হাত-পা বেঁধে জীবন্ত, অর্ধমৃত কিংবা হত্যা করে মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীতে ফেলে দিত। হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতার শিকার এ সকল শহীদের স্মরণে চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র মোলহেড ও নৌঘাটের সন্নিকটে বড় স্টেশন বধ্যভূমিতে নির্মিত হয় স্মৃতিসৌধ ‘রক্তধারা’।
২০১১ সালে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক প্রিয়তোষ সাহার উদ্যোগ এবং পৌর মেয়র মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় বড় স্টেশন বধ্যভূমিতে এ স্মৃতি ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়। রক্তধারার মূল বেদীতে ঢেউ খেলানো ৩টি দেয়াল ৩টি নদী পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়ার মিলনস্থলের প্রতীক। ভেতরের ম্যুরালের কাজটি চাঁদপুরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য এবং ত্রিকোণ কলামের চতুর্দিকের টেরাকোটার কাজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে নির্দেশ করে। ত্রিকোণাকৃতির স্তম্ভের টেরাকোটা ৩টি ঐতিহাসিক ঘটনা যথাক্রমে ভাষা-আন্দোলন, ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ ও অসহযোগ আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়কে নির্দেশ করে। ওপরের তিনটি লাল রক্তের ফোঁটা এবং লাল আলোক রশ্মির সঙ্গে প্রবহমান পানির ধারা বীর শহীদদের রক্তের ধারা নির্দেশ করে। এ ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রক্তধারার সামনে স্থাপিত ফলকে নিম্নোক্ত চারটি লাইন লেখা আছে-
নরপশুদের হিংস্র থাবায় মৃত্যুকে তুচ্ছ করেছে যারা
এখানে ইতিহাস হয়ে আছে, তাঁদের রক্তধারা,
এ শুধু স্মরণ নয়, নয় ঋণ পরিশোধ,
এখানে অবনত হয়ো শ্রদ্ধায়, নরপশুদের জানিও ঘৃণা আর ক্রোধ॥
[মনিরুজ্জামান শাহীন ও মোহেববুল্লাহ খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!