You dont have javascript enabled! Please enable it! যোগীরঘোল বধ্যভূমি ও গণকবর (ভোলা) - সংগ্রামের নোটবুক

যোগীরঘোল বধ্যভূমি ও গণকবর (ভোলা)

যোগীরঘোল বধ্যভূমি ও গণকবর (ভোলা) ভোলা সদর উপজেলায় অবস্থিত। এর পশ্চিম পাশে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের সীমানা প্রাচীর, উত্তরদিকে যোগীরঘোল ভকেশনাল সড়ক, পূর্বদিকে বেলাল শিকদারের বাড়ি এবং দক্ষিণ দিকে কবরস্থান ও বাগিচা। বধ্যভূমিটি সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় এ স্থানটি ছিল ফাঁকা ও নিচু। পাকবাহিনী এখানে অসংখ্য লোককে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়। পার্শ্ববর্তী ওয়াপদা প্রাঙ্গণেও অনেককে হত্যা করে এখানে এনে কবর দেয়া হয়। রাজাকার কমান্ডার আবদুল্লাহ মৌলভী জল্লাদ হিসেবে তাদের সহায়তা করে। স্বাধীনতার পর ভোলার জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে স্থানটি বধ্যভূমি ও গণকবর হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়।
পাকবাহিনী ৬ই মে ভোলায় প্রবেশ করে এবং ৯ই মে শহরে প্রথম হত্যাকাণ্ড চালায়। যোগীরঘোল ও ওয়াপদা এলাকায় হত্যাকাণ্ড চালায় জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের ৯ তারিখ পর্যন্ত। তবে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড চলে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে। এখানে কত লোককে হত্যা করে কবর দেয়া হয়েছে, তার সঠিক হিসাব দেয়া সম্ভব নয়। কারণ, ভোলার অনেক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ঐসব এলাকার পরিবারগুলো অন্যত্র চলে গেছে। অনেক সংখ্যালঘু পরিবার দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে গেছে। তাছাড়া ভোলায় আশ্রয়গ্রহণকারী ও ভ্রাম্যমাণ লোকদেরও বন্দি করে ওয়াপদা অফিসে নিয়ে আসা হতো। তারপর সেখান থেকে কাউকে থানায়, কাউকে খেয়াঘাটে এবং কাউকে ওয়াপদায় বন্দি করে নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো। হত্যার পর কোনো-কোনো লাশ এ গণকবরে মাটিচাপা দেয়া হতো, আবার কোনো-কোনো লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হতো। প্রতিরাতেই পাকবাহিনী বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে বাঙালিদের হত্যা করত। ১০ই ডিসেম্বর ভোলা মুক্ত হওয়ার পর এখানে অনেক নরকঙ্কাল দেখা যায়। সেসব দেখে ধারণা করা হয় যে, এখানে অসংখ্য লোককে হত্যা করা হয়৷ যোগীরঘোল গণকবরে শায়িত শহীদদের মধ্যে যাঁদের পরিচয় পাওয়া গেছে, তাঁরা হলেন: মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (আলগী), ডা. আমিনউদ্দিন (যোগীরঘোল), জাবেদ আলী ফরাজী (চরপাতা, দৌলতখান), মাওলানা আবদুস সোবহান (নবীপুর), আতাউর রহমান (পাতারহাট, মেহেন্দীগঞ্জ, বরিশাল; ওয়াপদার স্পিডবোট ড্রাইভার), শেফালী পাল (কালীনাথ বাজার), নূরুল ইসলাম (ভোলা শহর), মোহাম্মদ উল্লাহ কন্ট্রাক্টর (দুলারহাট, চরফ্যাশন), মফিজুল (সাহেবের চর), মো. ইয়াছিন (চরছিফুলী), আজিজুল হক (সাহেবের চর), কাজল (সাহেবের চর), আবদুর রশীদ, গৌরাঙ্গ (রতনপুর), মালতী রাণী (উত্তর চরফ্যাশন), শোভা রাণী (উত্তর চরফ্যাশন), শ্যামল চন্দ্ৰ দে (চরফ্যাশন), কৃষ্ণকান্ত ভক্ত (ভবানীপুর, দৌলতখান), আবু তাহের (ইলিশা), মো. সালেম (মুসলিমপাড়া), শংকরচন্দ্র দে, ওমর আলী, মো. হোসেন, আজাহার আলী (চররমেশ), আবদুল লতিফ (ভেদুরিয়া) এবং চিন্তাহরণ গাঙ্গুলী (ভোলা শহর)। [মো. রফিকুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড