You dont have javascript enabled! Please enable it!

যশোর রেলস্টেশন মাদ্রাসা গণহত্যা (যশোর সদর)

যশোর রেলস্টেশন মাদ্রাসা গণহত্যা (যশোর সদর) সংঘটিত হয় ৪ঠা এপ্রিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও স্থানীয় বিহারিরা এ হত্যাকাণ্ড চালায়। এতে ২৩ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
২৬শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সারা দেশের ন্যায় যশোর শহরও জেগে ওঠে। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার- হাজার ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, ইপিআর ও বাঙালি সেনা এসে যশোর শহর ও সেনানিবাস ঘিরে রাখে। ২রা এপ্রিল ছাত্র-জনতা যশোর ঈদগাহ ময়দানে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেয় এবং দেশের মুক্তির জন্য শপথ গ্রহণ করে। ৩রা এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে আসে। তারা শহরের বিভিন্ন বাড়িতে হানা দিয়ে নানা বয়সের মানুষদের হত্যা করে। নিরীহ সাধারণ মানুষ জীবনের দায়ে যে যেখানে পেরেছে পালানোর চেষ্টা করেছে। কিছু মানুষ প্রাণ বাঁচানোর জন্য যশোর রেলস্টেশন মাদ্রাসায় আশ্রয় নেয়। ৪ঠা এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে পাকিস্তানি বাহিনী ও বিহারিরা মাদ্রাসায় প্রবেশ করে। এর পূর্বে মাদ্রাসার বড় হুজুর মাওলানা হামিদুর রহমান বুটপায়ে তাদের মাদ্রাসায় প্রবেশ করা থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা ও তিরস্কার করেন। তখন আবুল বিহারি, জাপা বিহারি ও মুন্না বিহারি হানাদারদের কাছে তাঁকে ছদ্মবেশী ইপিআর সদস্য ও পাকিস্তানের শত্রু হিসেবে তুলে ধরে। বিহারিদের মুখে এ কথা শুনে হানাদাররা মাওলানা হামিদুর রহমানের বুকে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেয়। এরপর মাদ্রাসায় ঢুকে খুঁজে-খুঁজে সেখানে আশ্রয় নেয়া সাধারণ মানুষ ও মাদ্রাসার লোকজনদের হত্যা করে। ঐদিন এ মাদ্রাসায় মাওলানা হামিদুর রহমান-সহ মোট ২৩ জন লোক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। তাদের রক্তে মাদ্রাসা অঙ্গন রঞ্জিত হয়ে যায়।
এ গণহত্যায় শহীদদের মধ্যে ১২ জনের নাম-পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন তাহেরউদ্দিন, এ বি এম আবদুল হামিদ (জেলা মৎস্য কর্মকর্তা), এ বি এম কামরুজ্জামান (মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র), কাজি আবদুল গনি (চাঁচড়া, যশোর শিক্ষাবোর্ডের কর্মচারী), কাজি কামারুজ্জামান (চাঁচড়া), কাজি দীন মুহম্মদ (খুলনা কমিশনার অফিসের কর্মচারী), আইয়ুব হোসেন (যশোর সম্মিলনি স্কুলের শিক্ষক), কাজি আবুল কালাম আজাদ (যশোর কালেক্টর অফিসের কর্মচারী), মাওলানা হামিদুর রহমান (মাদ্রাসার শিক্ষক), আবদুর রউফ (যশোর জেলা স্কুলের শিক্ষক), আতিয়ার রহমান (ছাত্র) এবং নোয়াব আলি (ছাত্র)। এঁদের মধ্যে প্রথম ৩ জন একই পরিবারের সদস্য এবং যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়ার ডাল মিল এলাকার বাসিন্দা। তাহেরউদ্দিন ছিলেন এ বি এম আবদুল হামিদের পিতা এবং এ বি এম কামরুজ্জামান ছিলেন আবদুল হামিদের পুত্র। শহীদদের মাদ্রাসার সামনে গণকবর দেয়া হয়। [মহসিন হোসাইন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!