You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.21 | যাদবপুর-রাজাপুর যুদ্ধ (ঝিকরগাছা, যশোর) - সংগ্রামের নোটবুক

যাদবপুর-রাজাপুর যুদ্ধ (ঝিকরগাছা, যশোর)

যাদবপুর-রাজাপুর যুদ্ধ (ঝিকরগাছা, যশোর) সংঘটিত হয় ২১শে সেপ্টেম্বর। এ যুদ্ধে দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। অপরপক্ষে হানাদার বাহিনীর ২০-২২ জন নিহত হয়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এ এলাকায় নিয়মিত টহল দিত। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল ভারত থেকে যাতে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে। ভারতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়ই সীমান্ত অতিক্রম করে এসে সুবিধামতো স্থানে এম্বুশ করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২১শে সেপ্টেম্বর একদল মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহল দলকে এম্বুশ করেন। তাঁরা সুবিধাজনক একটি স্থানে অবস্থান নেন। জায়গাটি ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। আশপাশে বাড়িঘর বা মানুষজন ছিল না। মুক্তিযোদ্ধাদের সেখানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এক পর্যায়ে সেনা টহল দল সেখানে হাজির হয়। তারা ফাঁদের মধ্যে আসা মাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র গর্জে ওঠে। পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ চালায়। গোলাগুলিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। পাকিস্তানি সেনারা অস্ত্রশস্ত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে এগিয়ে ছিল। প্রথম দিকে তারা ব্যাপক গোলাগুলি করে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা বিচলিত না হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। পাকিস্তানি সেনারা কিছুক্ষণের মধ্যেই কোণঠাসা ও পর্যুদস্তু হয়ে পড়ে। গুলির আঘাতে একের পর এক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। তিন-চারজন সঙ্গে-সঙ্গে নিহত হয়। বাকিরা আহত। এরপর পাকিস্তানিরা পালানোর পথ খুঁজতে থাকে। কিন্তু সে-পথও ছিল প্রায় রুদ্ধ। এ অবস্থায় তারা মরিয়া হয়ে যুদ্ধ শুরু করে। অন্যদিকে সাফল্য ও জয়ের নেশায় আবদুস সাত্তার ও তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধা অসীম সাহসের পরিচয় দেন। প্রবল গোলাগুলির মধ্যে তাঁরা নিরাপদ স্থান থেকে বেরিয়ে ক্রলিং করে এগিয়ে যান পাকিস্তানি সেনাদের দিকে। বীর বিক্রমে চড়াও হন শত্রুদের ওপর। তাঁদের অস্ত্রের গুলিতে হতাহত হয় আরো কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। এমন সময় হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হন অদম্য সাহসী মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তার।
শত্রুর এলএমজির বুলেট বিদীর্ণ করে দেয় তাঁর দেহ। লুটিয়ে পড়েন তিনি। রক্তে ভেসে যায় মাটি। সঙ্গে-সঙ্গে নিভে যায় তাঁর জীবন প্রদীপ। শহীদ হন তিনি। সেদিন যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহল দলের প্রায় সবাই নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে আবদুস সাত্তারসহ দুজন শহীদ ও তিন-চারজন আহত হন। যুদ্ধশেষে সহযোদ্ধারা আবদুস সাত্তারকে শার্শা উপজেলার অন্তর্গত কাশীপুরে সমাহিত করেন। এখানে নূর মোহাম্মদ শেখ, বীরশ্রেষ্ঠ সহ আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সমাধি রয়েছে। [ফখরে আলম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড