You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক মোহাম্মদ সফিক উল্লাহ - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক মোহাম্মদ সফিক উল্লাহ

মোহাম্মদ সফিক উল্লাহ, বীর প্রতীক (১৯৪১-২০০৮) কর্নেল (অব.) ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪১ সালে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার কৈলান (মিয়া বাড়ি) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলভী সাহেব উল্লাহ, মাতার নাম রাবেয়া খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাস করে তিনি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর মোহাম্মদ সফিক উল্লাহ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং ঝিনাইদহ এলাকার বিভিন্ন প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ সরকার- কর্তৃক এ অবদানের জন্য তাঁকে সরাসরি সেকেন্ড লেটটেন্যান্ট পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আত্তীকরণ করা হয়। পরবর্তীতে অকুতোভয় এ যোদ্ধা যুদ্ধক্ষেত্রে ক্যাপ্টেন পদমর্যাদায় উন্নীত হন। যুদ্ধক্ষেত্রে লব্ধ অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি ৮ নম্বর সেক্টরের হাকিম সাব-সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এ-সময় তিনি অনেকগুলো গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা রাখেন। এর মধ্যে বালিয়াডাঙ্গা যুদ্ধ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বালিয়াডাঙ্গা সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তানি বাহিনী বালিয়াডাঙ্গা সীমান্ত বরাবর তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান সুদৃঢ় করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ করার পরিকল্পনা করতে থাকেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মোহাম্মদ সফিক উল্লাহর নেতৃত্বে এক কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা ১৬ই সেপ্টেম্বর সীমান্ত অতিক্রম করে বালিয়াডাঙ্গায় অবস্থান নেন। ১৭ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করে। সারাদিন উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলে। ১৮ই সেপ্টেম্বর আবার যুদ্ধ শুরু হয়। হানাদার বাহিনীর ছোড়া গোলার স্প্রিন্টারের আঘাতে মোহাম্মদ সফিক উল্লাহ এক পর্যায়ে আহত হন। আহত হয়েও তিনি যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে চলে যাননি। একজন সহযোদ্ধা তাঁর ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ বেধে দিলে তিনি এ অবস্থায় যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। ঘণ্টাখানেক পরে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। কয়েকঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরলে তিনি পুনরায় যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। এতে তাঁর সহযোদ্ধারা উদ্দীপ্ত হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা প্রদর্শন ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মোহাম্মদ সফিক উল্লাহকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতার পর তিনি সেনাবাহিনীর চাকরিতে বহাল হয়ে কর্নেল পদমর্যাদায় পদোন্নতি লাভ করেন। চাকরিকালীন সময়ে তিনি সেনাসদর, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি, ২৪ পদাতিক ডিভিশন, আর্মি স্কুল অব এডুকেশন এন্ড এডমিনিস্ট্রেশন-এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে ১৯৯৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও বোর্ড অব গভর্নরস-এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করেন, যেগুলোর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে বাংলার নারী, একাত্তরের রণাঙ্গন : গেরিলাযুদ্ধ ও হেমায়েত বাহিনী, মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধে নৌকমান্ডো, মুক্তিযুদ্ধে আট নম্বর সেক্টর উল্লেখযোগ্য। তাঁর স্ত্রীর নাম নাসিমা আক্তার। এ দম্পতি ১ পুত্র সন্তানের জনক-জননী মোহাম্মদ সফিক উল্লাহ, বীর প্রতীক ২০০৮ সালের ৩১শে মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড