বীর প্রতীক মোহাম্মদ হাফিজ
মোহাম্মদ হাফিজ, বীর প্রতীক (১৯৩১-২০০৫) সুবেদার মেজর ও একজন নির্ভীক সৈনিক। তাঁর জন্ম ১৯৩১ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামে। তাঁর পিতা মুন্সি রহমত উল্লাহ। মোহাম্মদ হাফিজ ১৯৪৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বে তিনি সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে ৩য় বেঙ্গল রেজিমেন্টে সুবেদার মেজর পদে কর্মরত ছিলেন। ৩১শে মার্চ শেষ রাতে পাকসেনারা বাঙালি সৈনিকদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করে। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর তিনি অন্যান্য বাঙালি সৈন্যদের সঙ্গে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসেন। দিনাজপুরের দশমাইল নামক স্থানে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধের পর দেবীগঞ্জে ক্যাম্প স্থাপন করেন। ২০শে এপ্রিল হিলিতে পাকবাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধের পর আঙ্গিনাবাদে পুনরায় ক্যাম্প স্থাপন করেন। মেজর শাফায়াত জামিল, বীর বিক্রমএর অধীনে ৩য় বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিয়ে মোহাম্মদ হাফিজ বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে থাকেন। জুন মাসে কয়েকটি রেজিমেন্টের সমন্বয়ে ‘জেড’ ফোর্স গঠিত হলে তিনি তাঁর বাহিনীসহ এ ব্রিগেডের সঙ্গে যুক্ত হন। ‘জেড’ ফোর্সের হয়ে তিনি নকশী বিওপিসহ বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন। ২৪শে অক্টোবর শেষ রাতে গোয়াইনঘাট আক্রমণে তাঁর বাহিনী পাকসেনাদের ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে যায়। প্রচণ্ড সাহসিকতা ও কৌশলের সঙ্গে লড়াই করে তিনি শত্রুপক্ষের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মোহাম্মদ হাফিজকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ৪ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম আম্বিয়া খাতুন। ২০০৫ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি এ বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেন। [হারুন রশীদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড