You dont have javascript enabled! Please enable it! মৌজপুর যুদ্ধ (মাধবপুর, হবিগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

মৌজপুর যুদ্ধ (মাধবপুর, হবিগঞ্জ)

মৌজপুর যুদ্ধ (মাধবপুর, হবিগঞ্জ) সংঘটিত হয় এপ্রিলের শেষার্ধে। এতে একজন মুক্তিযোদ্ধা গুলিবিদ্ধ হন। মাধবপুর থানা সদর থেকে পূর্বদিকে প্রায় দেড় মাইল দূরত্বে আদাঐর ইউনিয়নের মৌজপুর গ্রাম। এখানে ছিলেন গণবাহিনীর কিছু মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা প্রাক্তন মুজাহিদ, আনসার এবং ইপিআর বাহিনীর সদস্য। কিছু ছাত্র-যুবকও তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। মৌজপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধারা একটি ঘাঁটি স্থাপন করেন। সেখান থেকে তাঁরা পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছোটখাটো অপারেশন পরিচালনা করতেন। দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন নাসিম এবং লেফটেন্যান্ট হেলাল মোর্শেদ মাঝে- মাঝে এখানে আসতেন এবং তাঁদের নানাভাবে সাহায্য- সহযোগিতা করতেন ও পরামর্শ দিতেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার চান্দুরায় ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর একটি ক্যাম্প। এপ্রিল মাসের শেষার্ধে একদিন সেখান থেকে শত্রুরা মর্টার আক্রমণ শুরু করে। এক সঙ্গে তারা ৬-৭টি কামান থেকে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করতে থাকে। মৌজপুরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মর্টার ও কামান হামলায় বেসামরিক যানমালের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। কামান ও বোমার শব্দ ছিল ভয়াবহ। মরিয়া হয়ে চেষ্টা করেও মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের এই আক্রমণের মুখে টিকতে পারেননি। হালকা অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে কোনোক্রমেই মর্টার-কামানের মোকাবেলা করা সম্ভবও ছিল না। তাই তাঁরা পিছু হটে মনতলার দুর্গাপুর গ্রামে অবস্থান নেন। এ গ্রামের আবদুস সাত্তার মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। পরের দিন মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ রচনা করলেও বেশি সময় টিকতে পারেননি। ততক্ষণে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানিরা শেওলিয়া খাল অতিক্রম করে মিঠাপুকুর গ্রামে অবস্থান নেয়। পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে সুবিধা করতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা এখানে রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হন। এদিনের যুদ্ধে হাবিলদার আবুল কাশেম গুলিবিদ্ধ হন। বেসামরিক লোকদের মধ্যে যারা এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে ছিলেন শাহ মোহাম্মদ মুসলিম, শফিক উদ্দিন, মোখলেসুর রহমান ও মোহাম্মদ আলী পাঠানসহ অনেকে। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড