মৌলভীবাজার বিস্ফোরণ (মৌলভীবাজার সদর)
মৌলভীবাজার বিস্ফোরণ (মৌলভীবাজার সদর) ঘটে ২০শে ডিসেম্বর। এতে প্রায় অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হন। মৌলভীবাজার সদর উপজেলা ৮ই ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে অবস্থান নেন। বিজয়ের আনন্দে তখন তাঁরা ছিলেন আত্মহারা। তাঁদের একটি ক্যাম্প ছিল মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন স্থানে ফেলে যাওয়া ও পুঁতে রাখা অনেক মাইন ও গ্রেনেড উদ্ধার করে এ ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। ২০শে ডিসেম্বর দুপুরে সবাই যখন খাবারের আয়োজনে ব্যস্ত, তখন সেখানে রাখা অনেক বিস্ফোরক দ্রব্য প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে ক্যাম্পটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। পুরো বিদ্যালয় লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। মুহূর্তে হতাহত প্রায় অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধার দেহ এদিক-ওদিক ছড়িয়ে পড়ে। আহতদের ৭-৮ জনকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়।
প্রায় অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হলেও শহীদ ৩২ জনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন- রহিম বক্স খোকা (পিতা তাহের বক্স, শাহ মোস্তফা রোড, মৌলভীবাজার), ইয়নুর আলী (পিতা মো. লোকমান মিয়া, লালারচক, কুলাউড়া), শাহ আব্দুল আজিজ (পিতা আলাউদ্দিন, কৃষ্ণপুর, কমলগঞ্জ), কাজল পাল (নয়াসড়ক, জেলা সিলেট), ইব্রাহিম আলী (পিতা ইউনুছ আলী, মনোহরপুর, কুলাউড়া), প্রদীপ চন্দ্র দাস (পিতা পরেশ চন্দ্র দাস, টেংরাবাজার, রাজনগর), সত্যেন্দ্র চন্দ্র দাস (পিতা সুরেশ চন্দ্র দাস, ধুলিঝুরি, রাজনগর), নন্দলাল বাউরী (পিতা সুবল বাউরী, চাতলাপুর, কমলগঞ্জ), তরণী মোহন দেব (পিতা নর্মদ চরণ দেব, টেংরা, রাজনগর), সুলেমান মিয়া (ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট), আছকর আলী (পিতা হামিদ উল্লাহ, মনোহরপুর, কুলাউড়া), জহির মিয়া (পিতা আফতাব মিয়া, লালারচক, কুলাউড়া), শিশির রঞ্জন দেব (পিতা শশী মোহন দেব, শ্বাষমহল, রাজনগর), অরুণ দত্ত (পিতা অবনী দত্ত, শ্বাষমহল, রাজনগর), দিলীপ দেব (পিতা অতুল চন্দ্র দেব, রাজখলা, রাজনগর), সনাতন সিংহ (পিতা বাবুসোনা সিংহ, নলডরী, কুলাউড়া), সমীর চন্দ্র সোম (পিতা সুধীর চন্দ্র সোম, জানালীয়া রোড, শ্রীমঙ্গল), হিমাংশু কর (পিতা মনধর কর, সাবিয়া, মৌলভীবাজার), জিতেশ চন্দ্র দেব (পিতা কুমুদ চন্দ্ৰ দেব, মাতারকাপন, মৌলভীবাজার), আব্দুল আলী (পিতা হাবিব উল্লা, লালারচক, কুলাউড়া), নূরুল ইসলাম (ময়মনসিংহ), মোস্তফা কামাল (ময়মনসিংহ), আশুতোষ দেব (পিতা ঠাকুর মণি দেব, ইছবপুর, শ্রীমঙ্গল), নরেশ চন্দ্র ধর (পিতা ঈন্দ্রমণি ধর, কামালপুর, মৌলভীবাজার), আব্দুল খালিক, আব্দুল জব্বার, তারা মিয়া, মুহাম্মদ আব্দুল, ক্ষিতীশ চন্দ্র দেব, রবীন্দ্র ভট্টাচার্য, মাখন চন্দ্র পাল ও কানু চন্দ্র দাস। সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ এক সঙ্গে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে সমাহিত করা হয়। ২০শে ডিসেম্বর মৌলভীবাজারে সম্প্রীতির এক স্মরণীয় দিন। প্রতিবছর মৌলভীবাজারবাসী অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে এ দিনটি পালন করে। [আবদুল হামিদ মাহবুব]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড