You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা ১৯৬০-এর দশকের প্রথমদিকে মৌলভীবাজারে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, এনএসএফ, ইসলামী ছাত্র সংঘ- এসব দল ও সংগঠনের তৎপরতা ছিল। কিন্তু ৬২-র শিক্ষানীতিবিরোধী আন্দোলন, আওয়ামী লীগ-এর ৬-দফা, ছাত্রদের ১১- দফা, ৬৮-র আগরতলা মামলা, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান- ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজারে প্রগতিশীল ও স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তিশালী ভিত্তি রচিত হয়। ৭০-এর নির্বাচনের সময় মৌলভীবাজারে জাতীয় পরিষদের দুটি এবং প্রাদেশিক পরিষদের পাঁচটি আসন ছিল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ (ওয়ালী), মুসলিম লীগ (কনভেনশন), মুসলীম লীগ (কাউন্সিল), জামায়াতে ইসলামী, জামায়াতে উলামায়ে ইসলামী এবং জাতীয় লীগের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২৮শে নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- সিলেটে নির্বাচনী প্রচার শেষে রাত ১২টায় মৌলভীবাজার যান। রাত ১টায় মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেন। তাঁর ভাষণ শোনার জন্য গভীর রাতে হাজার- হাজার মানুষ উপস্থিত হয়। মৌলভীবাজার-রাজনগর-কমলগঞ্জ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ ইলিয়াস এমএনএ এবং মৌলভীবাজার সদর আসন থেকে মো. আজিজুর রহমান এমপিএ নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালের ১লা মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণা দিলে মৌলভীবাজারের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ভাষণ পরদিন রেডিওতে শোনার পর মৌলভীবাজারের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা পান। ৮ই মার্চ রাতে মো. আজিজুর রহমান এমপিএ-কে আহ্বায়ক করে মহকুমা সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। সংগ্রাম কমিটির বৈঠকে সশস্ত্র সংগ্রামের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ কমিটির উদ্যোগে আবদুল মালিক ও আবদুল মছব্বিরের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠিত হয়।
২৩শে মার্চ স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পাকিস্তান দিবসকে প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মৌলভীবাজারের ছাত্ররা কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে শহরের চৌমোহনায় সমাবেশ করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহকুমা ছাত্রলীগ-এর সভাপতি দেওয়ান আবদুল ওয়াহাব চৌধুরী। বক্তব্য শেষে ছাত্রনেতা মোহাইমিন সালেহ পাকিস্তানের পতাকায় আগুন দেন। এরপর সভাপতি দেওয়ান আবদুল ওয়াহাব চৌধুরী বাংলাদেশের মানচিত্র-অঙ্কিত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় ছাত্রদের কণ্ঠে স্লোগান ওঠে ‘জিন্নাহর পাকিস্তান, আজিমপুরের গোরস্তান’। এদিন বিক্ষুব্ধ শিল্পী ও সাহিত্যিকদের একটি মিছিল প্রতিবাদী গান গেয়ে মৌলভীবাজার শহর প্রদক্ষিণ করে। এ মিছিলে নেতৃত্ব দেন নুরুল ইসলাম, আজিজুল হক ইকবাল, সৈয়দ সুজাউল করিম, নূরুজ্জামান, এম এ রউফ প্রমুখ।
২৫শে মার্চ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াসউদ্দিন মনির ও মো. ফয়জুর রহমান আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ব্যোমকেশ ঘোষের সঙ্গে বৈঠক করেন। এদিকে শ্রীমঙ্গল থেকে মোহাম্মদ ইলিয়াস এমএনএ-এর কাছে ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকায় সেনাবাহিনীর নির্বিচারে মানুষ হত্যা ও অগ্নিসংযোগের খবর এলে তিনি রাতেই মো. আজিজুর রহমান এমপিএ-কে চিঠি লিখে গ্রেফতার এড়িয়ে সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কৌশল নির্ধারণের পরামর্শ দেন।
২৯শে মার্চ থেকে ২৬শে এপ্রিল পর্যন্ত মৌলভীবাজার শহর মুক্ত এলাকা ছিল। এ- সময়ে ছাত্রনেতা মাহমুদুর রহমান, দেওয়ান আবদুল ওয়াহাব চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজিজ আহমদ বেগ প্রমুখ এলাকার যুবকদের সংগঠিত করেন। মৌলভীবাজার কলেজ মাঠে লাঠি এবং রাইফেল দিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এ প্রশিক্ষণে স্কুল-কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও অংশ নেয়। এখান থেকে বাছাই করে ৪৫ জনের একটি দলকে বড়লেখার লাঠিটিলায় পাঠানো হয়। সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন মেজর তাদের প্রশিক্ষণ দেন। আরেকটি দলকে শ্রীমঙ্গল সীমান্তের ওপারে আসামবাড়িতে পাঠানো হয়। এছাড়া ভারতের বিভিন্ন স্থানে মৌলভীবাজারের মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
মৌলভীবাজারে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে মোহাম্মদ ইলিয়াস এমএনএ, মো. আজিজুর রহমান এমপিএ, সৈয়দ মতিউর রহমান, শফকতুল ওয়াহেদ, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, রাধিকা মোহন গোস্বামী, মির্জা আজিজ আহমদ বেগ, মাহমুদুর রহমান, ফরিদ বেগ, দেওয়ান আবদুল ওয়াহাব চৌধুরী প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মৌলভীবাজারে ২৬শে মার্চ থেকে ৭২ ঘণ্টার কার্ফু ঘোষণা করায় ছাত্রনেতারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য ২৭শে মার্চ কার্ফু ভঙ্গ করে মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেন। ঠিক করা হয় যে, একই সময়ে মৌলভীবাজার শহরের দুদিক থেকে দুটি মিছিল শহরে প্রবেশ করবে। একটি মিছিল পশ্চিমদিকের কামালপুর বাজার থেকে শাহ বন্দর এবং অন্যটি একাটুনা বাজার থেকে চাদনীঘাট ব্রিজ হয়ে শহরে ঢুকবে। ছাত্রনেতা মাহমুদুর রহমান ও গোলাম মওলা সকাল ১০টায় মিছিল নিয়ে শহর অভিমুখে যাত্রা করেন। এ মিছিলে লাঠি, বল্লম ও সড়কি হাতে স্বতঃস্ফূর্ত কয়েক হাজার মানুষ ‘জয় বাংলা’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। এ- সময় সিলেট থেকে পাকসেনা বোঝাই দুটি ট্রাক শাহ বন্দরের কাছে মিছিলের পেছনে আবস্থান নেয়। অপরদিকে মৌলভীবাজার থেকে আসা এক জিপ পাকিস্তানি সৈন্য মিছিলকারীদের ওপর আক্রমণ করলে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ-সময় কয়েকজন লাঠি ও বর্শা নিয়ে হানাদার সৈন্যদের দিকে ছুটে গেলে তারা গুলি চালায়। ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে শাহ বন্দর গ্রামের তারা মিয়া এবং রাধানগর গ্রামের জমির মিয়া শহীদ হন। বেলা আড়াইটায় ছাত্রলীগ নেতা গিয়াসউদ্দিন মনির ও সাজ্জাদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি মিছিল শহরের দিকে অগ্রসর হয়। লাঠি, সড়কি ও ..বল্লম হাতে হাজার-হাজার মানুষ এ মিছিলে অংশ নেয়। মিছিলটি চাঁদনীঘাট ব্রিজ পাড় হবার সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি গাড়ি এসে ব্রিজে ওঠে৷ মিছিলে নেতৃত্বদানকারী সাজ্জাদুর রহমান গাড়ি লক্ষ করে দুনালা বন্দুক দিয়ে দুটি গুলি করেন। পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা গুলি করে। এতে গুজারাই গ্রামের লুন্দুর মিয়া শহীদ এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। এদিন চাঁদনীঘাট ব্রিজের কাছের শ্মশানঘাট সংলগ্ন সিএন্ডবির ইটখোলার ৭ জন শ্রমিককে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ড চাঁদনীঘাট গণহত্যা নামে পরিচিত। এ হত্যাকাণ্ডের তারিখ ছিল ২৭শে মার্চ।
পাকিস্তান দিবসে ছাত্ররা পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে ছিল বলে ২৮শে মার্চ পাকবাহিনী ন্যাপ-কর্মী গৌরপদ দেব কানুকে ধরে প্রাইমারি টিচার্স টেনিং ইনস্টিটিউটে নিয়ে নির্যাতন শেষে হত্যা করে। এখানে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা শ্রীনিবাস ভট্টাচার্য বলাইকেও নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। এদিন কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে বাঙালি ইপিআর ও মুজাহিদ অফিসার ক্যাপ্টেন সাজ্জাদুর রহমান ও ক্যাপ্টেন মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি পরিকল্পিত অভিযানে পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন গোলাম রসুল- সহ ১১ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং আহত অবস্থায় দুজন আটক হয়। এ ঘটনায় মৌলভীবাজারে অবস্থান নেয়া পাকসেনাদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। ২৯শে মার্চ ভোরে তারা এসডিপিও আবদুল আজিজ খানকে সঙ্গে নিয়ে মৌলভীবাজার ছেড়ে শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর অপর পাড়ে অবস্থান নেয়।
পাকবাহিনী মৌলভীবাজার ছাড়ার পর শহরের পর্যটন রেস্টহাউস ও প্রাইমারি টিচার্স টেনিং ইনস্টিটিউট মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে পরিণত হয়। এ ক্যাম্পে এসে কর্নেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী – এমএনএ (মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি; স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে এমপি ও মন্ত্রী) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রব এমএনএ (মুক্তিযুদ্ধের চিফ অব স্টাফ), কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী এমএনএ, মেজর সি আর দত্ত, বীর উত্তম – প্রমুখ বৈঠক করেন। তাঁরা পাকবাহিনীর শেরপুরে অবস্থান এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা নিয়ে আলোচনা করেন। শেরপুর এলাকা মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার সংযোগস্থল হওয়ায় এর কৌশলগত গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। পাকবাহিনী শেরপুর অবস্থান করায় সিলেট তাদের দখলে ছিল। বৈঠকে মেজর সি আর দত্তকে সিলেট শত্রুমুক্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়।
১লা এপ্রিল থেকে শেরপুর অভিযানের প্রস্তুতি শুরু হয়। প্রয়োজনীয় মুজাহিদ, আনসার, ইপিআর সদস্য ও সাহসী ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত ও যুদ্ধের রসদ সংগ্রহ করে অভিযানের প্রস্তুতি শেষ হলে ৪ঠা এপ্রিল ক্যাপ্টেন আবদুল আজিজের নেতৃত্বে বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক প্লাটুন সৈন্য এসে যোগ দেয়। উল্লেখ্য যে, মৌলভীবাজারের ভারপ্রাপ্ত মহকুমা আনসার এডজুট্যান্ট ছিলেন চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার এ জে মনসুর আহমদ। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ছাত্ররা অস্ত্রাগার খুলে সকল অস্ত্র নিয়ে যায়। ছাত্রদের সহযোগিতা করায় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে মনসুর আহমদ শহীদ হন। ৪ঠা এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাদের শেরপুর অভিযান শুরু হয়। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর সারারাত যুদ্ধ চলে। এ যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর ১২ জন সৈন্য নিহত হয়। এখানে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকবাহিনী টিকতে না পেরে বাকিরা পিছু হটে। তিনদিনের ক্রমাগত যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পাকবাহিনী সিলেট শহর ছেড়ে বিমানবন্দরের কাছে সালুটিকরে অবস্থান নেয়। সিলেট অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধে শেরপুর প্রতিরোধযুদ্ধ – একটি বড় ঘটনা। ৬ই এপ্রিল সিলেট কারাগারের তালা ভেঙ্গে মো. আজিজুর রহমান এমপিএ ও ব্যোমকেশ ঘোষকে মুক্ত করে মৌলভীবাজার আনা হয়।
পাকবাহিনী সালুটিকরে অবস্থান নিয়ে আকাশপথে রসদ ও সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে মৌলভীবাজার দখলের চেষ্টা করে। ১৯, ২০ ও ২১শে এপ্রিল শেরপুরে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর যুদ্ধ হয়। মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ ভেঙ্গে গেলে কুশিয়ারা নদী পাড় হয়ে ২২শে এপ্রিল পাকবাহিনী মৌলভীবাজারে অনুপ্রবেশ করে। তবে বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধের সম্মুখীন হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ২৭শে এপ্রিল থেকে পাকবাহিনী মৌলভীবাজার শহরে শক্ত অবস্থান নেয়।
২৫শে মার্চ রাতে মৌলভীবাজার শহরে মুসলিম লীগ নেতা মো. ইনাম উল্লাহ ও মো. মিছির উল্লাহ মোক্তার পশ্চিম পাকিস্তানি এসডিপিও (মহকুমা পুলিশ কর্মকর্তা) আবদুল আজিজ খানের সঙ্গে শহর প্রদক্ষিণ করে। সিলেটের খাদিমনগর খামারবাড়ি থেকে কর্নেল সুলতান মাসুদ ও মেজর আজগরের নেতৃত্বে একদল পাকিস্তানি সৈন্য মহকুমা পর্যটন রেস্টহাউস ও পার্শ্ববর্তী প্রাইমারি টিচার্স টেনিং ইনস্টিটিউটে ক্যাম্প স্থাপন করে। ২৬শে মার্চ ভোরে মৌলভীবাজার শহরে ৭২ ঘণ্টার কার্ফু জারি করা হয়। কার্ফু জারি করে ভোরেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মো. আজিজুর রহমান এমপিএ-কে তাঁর বাড়ি থেকে ও চৌমোহনার ঘোষপট্টি থেকে ব্যোমকেশ ঘোষকে আটক করে। পাকিস্তানি বাহিনী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান মুজিবের বাসায় অভিযান চালায়। তাঁকে না পেয়ে তাঁর বাসায় অবস্থানকারী ছাত্রলীগ নেতা কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি মতিউর রহমান চৌধুরী ও ছাত্রলীগ কর্মী আজিবুর রহমানকে আটক করে। এছাড়া আরো অনেক রাজনীতিবিদ ও ছাত্রনেতার বাসায় হানাদাররা অভিযান চালায়। আটককৃতদের সবাইকে প্রাইমারি টিচার্স টেনিং ইনস্টিটিউটে নিয়ে নির্যাতন করে। পরে বাঙালি সৈনিকদের সহযোগিতায় মতিউর রহমান চৌধুরী ও আজিবুর রহমান পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।
দ্বিতীয় পর্যায়ে পাকবাহিনী মৌলভীবাজার অবস্থান করার পর পর্যটন রেস্টহাউস, প্রাইমারি টিচার্স টেনিং ইনস্টিটিউট, মৌলভীবাজার কলেজ, আনসার ট্রেনিং ব্যারাক ও মাঠ এবং মৌলভীবাজার সার্কিট হাউস নিয়ে তাদের বিগ্রেড হেডকোয়ার্টার্স ক্যাম্প গড়ে তোলে। এখানে এসডিও হিসেবে যোগ দেয় এম এ আউয়াল।
পাকবাহিনী ফিরে আসায় মৌলভীবাজারের মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে মুসলিম লীগ নেতা দেওয়ান আবদুল বাছিত, মো. ইনাম উল্লাহ, মো. মিছির উল্লাহ মোক্তার, জামায়াতে ইসলামী নেতা আবদুল জালাল চৌধুরী, আবদুস ছত্তার প্রমুখ পাকবাহিনীর বিগ্রেডিয়ার ইফতেখার রানার সঙ্গে দেখা করে। পাকবাহিনীর নির্দেশে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। শান্তি কমিটিতে যোগদানকারীদের মধ্যে ছিল- দেওয়ান আবদুল বাছিত, মো. ইনাম উল্লাহ, মো. মিছির উল্লাহ মোক্তার, এডভোকেট আবদুল জালাল চৌধুরী, হাবিবুর রহমান চৌধুরী, জরিফ আহমদ হোসেন, মঈন-উল-ইসলাম, এ এম আবদুল্লাহ চৌধুরী, মো. মেহের উল্লাহ, সৈয়দ সরফরাজ আলী, আজিজুর রহমান তরফদার, আজিজুর রহমান আকলু মিয়া, মাসুক মিয়া, কুটি মিয়া, পাখী মিয়া, বশির উদ্দিন, সাজিদুর রহমান, আবদুস ছত্তার, আবদুল মতিন, ছৈদুল্লা, মন্তাজ উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম মতলিব, মো. এরসাদ, আবাছ উল্লাহ, মিছবাহুর রহমান চৌধুরী, ছানু মিয়া, সমসু, আব্দুল মালিক মিয়া ওরফে ধন মিয়া, এম এ রশীদ, সৈয়দ আবু শাহজাহান প্রমুখ। এরা মৌলভীবাজারের প্রায় সকল গ্রামে শান্তি কমিটি গঠন করে। সরকারি কর্মকর্তাদের পরিচয়পত্র প্রদান করে। তারা সারা শহরে চেক পোস্ট বসিয়ে লোকজনের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করত। যাদের পরিচয়পত্র থাকত না তাদের হয়রানি ও নির্যাতন করা হতো।
পরে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। রাজাকার বাহিনীতে যারা তৎপর ছিল তাদের মধ্যে আবদুল ওদুদ, আজমল আহমদ, আবদুল ওয়ালী, সাজিদ উল্লাহ, ছিকন মিয়া, কাছিম মিয়া, ফুলরি মিয়া, মঈন উল্লাহ, মজু মিয়া প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। -আলবদর বাহিনীর প্রধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা সিরাজুল ইসলাম মতলিব। আলবদরদের মধ্যে বেশি তৎপর ছিল সৈয়দ মতিউর রহমান সানি, মিছবাহুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী ও আলবদরদের কাজ ছিল পাকবাহিনীকে সহযোগিতা করা। বিভিন্ন এলাকায় পথ চিনিয়ে নিয়ে যাওয়া। স্বাধীনতার পক্ষের কে কোথায় কাজ করছেন সেই খবর জানানো। কার বাড়ি থেকে কার সন্তান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে সেই খবর দেয়া। কোনো মুক্তিযোদ্ধা বাড়ি ফিরলে তাঁকে ধরে পাকবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া। এরা হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে পাকবাহিনীকে নিয়ে গিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যা চালাতে ভূমিকা রাখত। শেরপুরে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ ভেঙ্গে মৌলভীবাজার শহরে অনুপ্রবেশের পথে পাকবাহিনী ২৭শে এপ্রিল রাস্তার দুপাশের গ্রামগুলোতে হাজার-হাজার রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। এতে শিশু, বৃদ্ধ, যুবক, যুবতীসহ অসংখ্য মানুষ নিহত হয়। রাস্তার উভয় পাশের বেশির ভাগ বাড়ির এক-দুজন লোক নিহত হয়। এ-সময় পাকবাহিনী শতশত বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
পাকবাহিনী ১২ই মে সারা মৌলভীবাজার শহরে মাইকিং করে পরদিন ১৩ই মে চাঁদনীঘাটের মনু নদীর ওপরের ব্রিজে একটি প্রদর্শনী দেখার আমন্ত্রণ জানায়। প্রদর্শনী দেখার জন্য অনেক মানুষ জড়ো হয়। এসব মানুষের সামনে স্বাধীনতার পক্ষের তিনজন দেশপ্রেমিক প্রবাসী হাজী মো. উস্তার, সিরাজুল ইসলাম কলন্দর মিয়া ও আনসার এডজুট্যান্ট এ জে মনসুর আহমদকে গুলি করে হত্যা করে, যা চাঁদনীঘাট ব্রিজ গণহত্যা নামে পরিচিত। সেখানে মাইকের মাধ্যমে শান্তি কমিটির মহকুমা আহ্বায়ক মো. মিছির উল্লাহ মোক্তার তাঁদের হত্যার ঘোষণা দেয়। ব্রিজের ওপর তাঁদের হত্যা করে হানাদার সৈন্যরা লাথি দিয়ে তিনজনের লাশ নদীতে ফেলে দেয়। এ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে অনেকেই বিক্ষুব্ধ হয়। রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকবাহিনী মৌলভীবাজারে ২৭শে এপ্রিল পৈলাভাগ গণহত্যা সংঘটিত করে। এ গণহত্যায় ৫০-৬০ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান। এদিন পাকবাহিনী ও রাজাকাররা বাসুদেবশ্রী গ্রামে ৪ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। মৌলভীবাজার সদরের একটি গ্রাম বাউরভাগ। একই দিনে বাউরভাগ গণহত্যায় ১০ জন নিরীহ মানুষ শহীদ হন।
হানাদারদের হাতে ২৭শে এপ্রিল ত্রৈলোক্যবিজয় গ্রামে এক গণহত্যা সংঘটিত হয়। ত্রৈলোক্যবিজয় গণহত্যায় ১৫- ২০ জনের প্রাণহানি ঘটে।
পাকবাহিনী ও রাজাকাররা ২৭শে এপ্রিল একই পরিবারের ৭ জন সহ কামালপুর গ্রামের ২৫-৩০ জন মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কামালপুর গণহত্যা-র স্মৃতি এ এলাকায় হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পরিচয় বহন করছে।
১লা মে পাকবাহিনী এ গ্রামে আক্রমণ করে। এ আক্রমণে ৬ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। বাউরভাগ গণহত্যার পর পাকবাহিনী ও রাজাকাররা গ্রামের অনেক বাড়িতে লুণ্ঠন চালায়।
এ উপজেলার ভুজবল-আজমেরু গ্রাম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের দ্বারা ১লা মে আক্রান্ত হয়। পুরো গ্রামে তারা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পর হত্যাকাণ্ড চালায়। খিদুর-গন্ধর্বপুর-আজমেরু-ভুজবল গণহত্যায় ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খিদুর গ্রামে ১লা মে খিদুর গণহত্যা সংঘটিত হয়। এতে ৯ জন মানুষ প্রাণ হারায়। পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা মৌলভীবাজারের নরিয়া গ্রামে এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে। ৯ই মে সংঘটিত নরিয়া গণহত্যায় ৫০ জন মানুষ নিহত হয়। এছাড়া মৌলভীবাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরো শতশত মানুষ পাকবাহিনী ও রাজাকারদের হাতে হতাহত হয়। এসব গ্রামের শতশত বাড়ি পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা লুণ্ঠিত এবং পরে আগুনে ভস্মীভূত হয়।
মৌলভীবাজারের প্রাইমারি টিচার্স টেনিং ইনস্টিটিউট-এ পাকবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার ইফতেখার রানার থাকার ব্যবস্থা ছিল। এখানে নারীদের ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের এখানে বন্দি করে রাখা হতো। পাকিস্তানি হানাদাররা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য আদায় করে বন্দিদের অনেককে হত্যা করে কূপের ভেতরে বা পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে লাশ ফেলে দিত।
মৌলভীবাজার কলেজের স্টাফ কোয়ার্টারের পূর্বপাশে বিভিন্ন সময়ে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। এ স্থানটি পিটিআই-পর্যটন রেস্ট হাউজ-কলেজ কোয়ার্টার্স বধ্যভূমি নামে পরিচিত।
মৌলভীবাজারে পাকবাহিনীর ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার্স ছিল প্রাইমার টিচার্স টেনিং ইনস্টিটিউটে। এখানে মাটির নিচে দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করে পাকবাহিনী। এটিকে তারা নির্যাতনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করত।
মৌলভীবাজারে কয়েকটি বধ্যভূমি ও গণকবর রয়েছে। গুলো হলো— মৌলভীবাজার কলেজ স্টাফ কোয়ার্টার্স বধ্যভূমি, নরিয়া বধ্যভূমি, পিটিআই বধ্যভূমি এবং মৌলভীবাজার শহরের বেরীরপাড়ের ৭ শহীদের কবর, পৈলভাগ, ত্রৈলোক্যবিজয়, কামালপুর, বাউরবাগ ও ভুজবল গ্রামের গণকবর।
মৌলভীবাজার শত্রুমুক্ত করার লক্ষ্যে ১লা ডিসেম্বর কর্নেল লক্ষণ সিং-এর নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী- কমলগঞ্জ উপজেলার চাতলাপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজিজ আহমদ বেগ তাঁদের গাইড হিসেবে কাজ করেন। পথে পাকবাহিনীর বিভিন্ন আক্রমণ প্রতিহত করে ৬ই ডিসেম্বর মৌলভীবাজার উপজেলার পাহাড়ি এলাকা বড়টিলার কাছে এলে খুব কাছ থেকে তাঁদের ওপর পাকবাহিনী গুলিবর্ষণ করে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী টিলার পেছনে অবস্থান নিয়ে পাল্টা গুলি করে। দুপক্ষের মধ্যে এখানে এক রাত যুদ্ধ হয়। মৌলভীবাজার বড়টিলা যুদ্ধ-এ মিত্রবাহিনীর বেশ কয়েকজন সৈন্য হতাহত হন। পরে বিমান আক্রমণ করলে পাকবাহিনী পিছু হটে। মৌলভীবাজারের পাকবাহিনীর ক্যাম্প বিমান হামলায় তছনছ হলে তারা সিলেট পালিয়ে যায়।
৮ই ডিসেম্বর ভোরে মৌলভীবাজার শত্রুমুক্ত হয়। আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজিজ আহমদ বেগ বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে মৌলভীবাজার মুক্ত হওয়ার ঘোষণা দেন। সেখানে মিত্রবাহিনীর কর্নেল লক্ষণ সিং উপস্থিত ছিলেন। মো. আজিজুর রহমান এমপিএ মহকুমা প্রশাসকের অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- আব্দুল মালেক, বীর বিক্রম (পিতা আব্দুল মান্নাফ চৌধুরী, দক্ষিণ কালিমাবাদ) ও মো. আবদুল মতিন, বীর প্রতীক (পিতা মো. আলফু মিয়া, বসুলপুর)।
মুক্তিবাহিনীর একটি ক্যাম্প ছিল মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। পাকহানাদার বাহিনীর বিভিন্ন স্থানে ফেলে যাওয়া ও পুঁতে রাখা মাইন-গ্রেনেড উদ্ধার করে এ ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। ২০শে ডিসেম্বর দুপুরের খাবারের আয়োজনে ক্যাম্পের সবাই যখন ব্যস্ত, তখন সেখানে এক প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে। মৌলভীবাজার বিস্ফোরণ হিসেবে পরিচিত এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁদের মধ্যে ১৮ জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাঁরা হলেন— রহিম বকস খোকা, ইয়নুর আলী, শাহ আব্দুল আজিজ, কাজল পাল, ইব্রাহিম আলী, রবীন্দ্র ভট্টাচার্য, প্রদীপ চন্দ্র দাস, সত্যেন্দ্র চন্দ্র দাস, নন্দলাল বাউড়ি, মুহাম্মদ আব্দুল, তরণী মোহন দেব, ক্ষিতীশ চন্দ্র দেব, সুলেমান মিয়া, আব্দুল খালিক, আব্দুল জব্বার, তারা মিয়া, মাখন চন্দ্র পাল ও কানু চন্দ্র দাস। মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছিন্নভিন্ন দেহগুলো সমাহিত করা হয়। এ স্থানটি সকল দেশপ্রেমী মানুষের সম্প্রীতির এক মিলন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ২০শে ডিসেম্বর মৌলভীবাজারবাসীর জন্য বেদনাময় একটি দিন। প্রতিবছর এ দিনটিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
মৌলভীবাজার শহরের দুটি রাস্তার নামকরণ হয়েছে দুজন শহীদের নামে। শমশেরনগর রোড থেকে বর্ষিজুরা অভিমুখী রাস্তার নাম দেয়া হয়েছে শহীদ আবদুস সহিদ সড়ক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসে যাওয়ার কিছু আগে যে রাস্তাটি সোনাপুর গিয়েছে সেটির নাম দেয়া হয়েছে শহীদ আবদুল মুকিত সড়ক। মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের ৫ জন শহীদ ছাত্রের স্মরণে কলেজের শহীদ মিনারের পাশে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভে শহীদ আবদুল মুকিত, শহীদ আবদুস সহিদ, শহীদ সুদর্শন দেব (এ তিনজন শ্রীমঙ্গলে পাকবাহিনীর হাতে ধৃত হয়ে নিহত হন), শহীদ রহিম বকস খোকা (২০শে ডিসেম্বর মোলভীবাজার বিস্ফোরণে নিহত) ও শহীদ কৃপেশ রঞ্জন কর (গণহত্যায় প্রাণ হারান)-এর নাম লেখা রয়েছে। [আবদুল হামিদ মাহবুব]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!