You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক মোহাম্মদ মতিউর রহমান

মোহাম্মদ মতিউর রহমান, বীর প্রতীক (১৯৪৪- ১৯৯৮) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৪ সালের ২রা জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম তোরাব আলী এবং মাতার নাম আফিয়া খাতুন। তিনি মুরাপাড়া হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। এবোটাবাদের কাকুলস্থ পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি থেকে সফলতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষ করে ১৯৬৬ সালে তিনি কমিশন প্রাপ্ত হন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে মতিউর রহমান ক্যাপ্টেন পদে ২৫ বেলুচ রেজিমেন্টে যশোর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট-এর নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ব্যাপক গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করলে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত নেন। ২৬শে মার্চ তিনি যশোর সেনানিবাস থেকে কৌশলে পালিয়ে এসে ৩০শে মার্চ ময়মনসিংহে সমবেত দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যোগ দেন এবং কে এম সফিউল্লাহ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করেন।
মতিউর রহমান যে-সকল প্রতিরোধযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঢাকা-নরসিংদী সড়কের করইতলার যুদ্ধ, বাবুরহাটের যুদ্ধ এবং পাঁচদোনার যুদ্ধ। এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাঁর নেতৃত্বে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) বাহিনীর এক কোম্পানি সৈন্য পাঁচদোনা সড়কের দু-পাশে এম্বুশ করেন। পাঁচটি পাক সৈন্যবাহী লরি সড়কপথে বাবুরহাটের দিক থেকে আসছিল। লরিগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের ফায়ারিং রেঞ্জের মধ্যে আসামাত্র মতিউর রহমান ফায়ার করার সংকেত দেন। মুহূর্তের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের মর্টার ও মেশিনগানের গোলার আঘাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা হতভম্ব হয়ে পড়ে। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে তারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। মতিউর রহমান ও তাঁর সহযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখেন। তাঁদের আক্রমণে শত্রুসেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, হতাহত হয় শতাধিক সৈন্য। তাদের তিনটি লরিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে অবশেষে তাঁরা বাবুরহাটে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে মতিউর রহমান ভারতে যান। তারপর সেক্টরভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ৩ নম্বর সেক্টরের হাতকাটা সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে বীরত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে অক্টোবর মাসে ব্রিগেড আকারে নিয়মিত বাহিনী ‘এস’ ফোর্স গঠন করা হলে তিনি দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১ নম্বর ব্যাটালিয়নের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে তিনি ঐ ব্যাটালিয়নের ‘এ’ কোম্পানির কমান্ডারের দায়িত্বও পালন করেন। পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে তিনি শায়েস্তাগঞ্জের নালুয়া চা-বাগান, আখাউড়া, আশুগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধ পরিচালনা করে কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার মোহাম্মদ মতিউর রহমানকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি তাঁর কর্মস্থল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং পদোন্নতি পেয়ে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। ১৯৯৮ সালের ২৮শে নভেম্বর এই বীর মুক্তিযোদ্ধা পরলোক গমন করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি চার কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নাম মিনা রহমান। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!