You dont have javascript enabled! Please enable it! নৌকমান্ডো বীর প্রতীক মোহাম্মদ মতিউর রহমান - সংগ্রামের নোটবুক

নৌকমান্ডো বীর প্রতীক মোহাম্মদ মতিউর রহমান

মোহাম্মদ মতিউর রহমান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫৭) নৌকমান্ডো এবং অপারেশন জ্যাকপট-সহ একাধিক নৌ অপারেশনে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৭ সালের ২৮শে আগস্ট মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল আলী শেখ এবং মাতার নাম জোলেখা বেগম। মোহাম্মদ মতিউর রহমান দশম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৭২ সালে তিনি লৌহজং থানার ব্রাহ্মণগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে সরকারি হরগঙ্গা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ছোটবেলা থেকে মোহাম্মদ মতিউর রহমান খেলাধুলা ও সাঁতারে খুব আগ্রহী ও দক্ষ ছিলেন। তাঁর এ আগ্রহ ও দক্ষতা মুক্তিযুদ্ধকালে বিশেষভাবে সহায়ক হয়।
মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার জন্য মোহাম্মদ মতিউর রহমান ৭১- এর এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ভারতে যান। তিনি প্রথমে কলকাতার টালিখোলা ক্যাম্পে যান। এখানে একদিন জেনারেল ওসমানী এসে ছাত্র-যুবকদের একত্রিত করে দেশের জন্য নিশ্চিত মৃত্যুর পথে যেতে আগ্রহী কি-না জানতে চান। মোহাম্মদ মতিউর রহমান তাঁর আগ্রহের কথা জানান। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় তিনি সাঁতার জানেন কি-না পদ্মাপাড়ের সন্তান মতিউর রহমান হাঁ সূচক জবাব দেন। এরপর আত্মঘাতী নৌকমান্ডো দলে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কলকাতা থেকে তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী পলাশিতে অবস্থিত নৌকমান্ডো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রেরিত হন। প্রায় ৩ মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তাঁরা আগস্ট মাস থেকে অপারেশন জ্যাকপট-এর অধীনে চট্টগ্রাম, মংলা, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ ও দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌকমান্ডো আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হন। মোহাম্মদ মতিউর রহমান নারায়ণগঞ্জ এলাকায় কমান্ডো আক্রমণের জন্য নির্বাচিত হন। তাঁর দলের কমান্ডারের নির্দেশে তিনি প্রধানত রেকি করার কাজে নিয়োজিত থাকতেন। তাঁর রেকিতে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দলনেতা অপারেশনের ছক তৈরি করতেন। রেকির পর মোহাম্মদ মতিউর রহমান অপারেশনেও অংশ নিতেন। অক্টোবর মাসে কাঁচপুর ব্রিজ এলাকায় রেকি করতে গিয়ে পাকসেনাদের হাতে তাঁর প্রায় ধরা পড়ার অবস্থা হয়। কিন্তু একটি খাবার হোটেলে ঢুকে দ্রুত প্লেট-কাপ পরিষ্কার করার কাজ শুরু করলে মালিকের সহায়তায় পাকসেনাদের সন্দেহ থেকে বেঁচে যান। মোহাম্মদ মতিউর রহমান নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দর, গলাগাছিয়া ঘাট, কাঁচপুর ফেরি ডুবানো ইত্যাদি অপারেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মোহাম্মদ মতিউর রহমানকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর প্রথমে জুট মিলস কর্পোরেশনে তিনি একাউন্টস এসিস্ট্যান্ট পদে যোগ দেন। ক্রিড়াবিদ হিসেবে তিনি প্রধানত বিভিন্ন টুর্নামেন্টে জুট মিলস কর্পোরেশনের প্রতিনিধিত্ব করতেন। ১৯৭২ সালে তিনি বর্শানিক্ষেপে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম পুরস্কার পান। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি জাপান ও সৌদি আরবে চাকরি করেন। এরপর দেশে ফিরে একটি গার্মেন্টস কোম্পানিতে ২০০১ সাল পর্যন্ত সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম লাইজু বেগম। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড