বীর প্রতীক মোহাম্মদ মোস্তফা
মোহাম্মদ মোস্তফা, বীর প্রতীক (১৯৪৮-১৯৭১) সিপাহি ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৮ সালের কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাসিতা ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বজলুর রহমান এবং মাতার নাম আছমতের নেছা। ২ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তাঁর প্রকৃত নাম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল।
মোহাম্মদ মোস্তফা ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। এরপর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেনাবাহিনীতে চাকরিকালে তিনি পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের বাঙালিদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব বুঝতে পারেন। ৭১- এর ফেব্রুয়ারিতে ২ মাসের ছুটি নিয়ে তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মোহাম্মদ মোস্তফা পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান না করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রথমে তিনি নিজ উপজেলা চৌদ্দগ্রামে ছাত্র-যুবকদের সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ২নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম-এর অধীনে রাজনগর সাব-সেক্টর এলাকায় গেরিলা এবং সম্মুখ যুদ্ধ করেন। লাকসাম রেল স্টেশনের উত্তর পাশে বাগমারা রেলসেতু ধ্বংস, মিয়া বাজার ও নোয়া বাজার অপারেশনে তিনি সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বাগমারা রেলসেতু ধ্বংস করলে কয়েকদিনের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ অপারেশনে মোহাম্মদ মোস্তফার কয়েকজন সহযোদ্ধা হতাহত হন। পরবর্তীকালে তিনি ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিন, বীর প্রতীকএর নেতৃত্বে নির্ভয়পুর সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করেন।
১লা ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল মেজর আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে কুমিল্লার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ৭ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করেন। তাঁরা কুমিল্লা সেনানিবাসের চারদিকে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নিয়ে কুমিল্লা সেনানিবাস আক্রমণের প্রস্ততি নিচ্ছিলেন। এমনি অবস্থায় ১৪ই ডিসেম্বর মোহাম্মদ মোস্তফার পকেটে থাকা একটি গ্রেনেডের পিন অসাবধানতাবশত খুলে যায়। এতে বিস্ফোরণ ঘটে এবং ঘটনাস্থলেই তিনি শহীদ হন। সহযোদ্ধারা তাঁকে নিজ বাড়ির পুকুর পাড়ে সমাহিত করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ সরকার মোহাম্মদ মোস্তফাকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড