You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৪) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৪ সালের ২রা জানুয়ারি ফেনী জেলার বর্তমান ফুলগাজী (তৎকালীন ছাগলনাইয়া) ) উপজেলার পূর্ব বশিকপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলী আহমদ এবং মাতার নাম আফিয়া খাতুন। তিনি ১৯৬০ সালে অজি আজম হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৬২ সালে ফেনী কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৬৪ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে (শট কোর্সে) যোগ দেন। এ বছরের অক্টোবর মাসে তিনি কমিশন প্রাপ্ত হন এবং লাহোর সেনানিবাসে ২৫ সিগন্যাল ব্যাটালিয়নে পোস্টিং পান।
১৯৭১ সালে শহীদুল ইসলাম ক্যাপ্টেন পদে পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতান সেনানিবাসের ৬ নম্বর সিগন্যাল ব্যাটালিয়নে ছিলেন। ১০ই ফেব্রুয়ারি তিনি দুমাসের ছুটিতে নিজ গ্রামে আসেন। এ- সময় দেশে উত্তাল রাজনৈতিক আন্দোলন চলছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ৭ই মার্চের দিকনির্দেশনামূলক ভাষণের পর বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় ফুলগাজী উপজেলায়ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়। শহীদুল ইসলাম উপজেলার ছাত্র, যুবক এবং সর্বস্তরের জনগণকে সংগঠিত করে জি এম হাট ও মুন্সির হাট হাইস্কুল মাঠে সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা অপারেশন সার্চলাইট-এর নামে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্মম হত্যাকাণ্ড শুরু করলে শহীদুল ইসলাম বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ৩০শে মার্চ থেকে শুরু করেন প্রতিরোধযুদ্ধ। তিনি অসীম সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সেক্টরভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ২ নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাব-সেক্টর কমান্ডার জাফর ইমাম, বীর বিক্রমএর সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কিছুকাল এ সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্বও পালন করেন। এ সাব-সেক্টরে শহীদুল ইসলাম বেশ কয়েকটি যুদ্ধে সরাসরি অবতীর্ণ হন। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়া যুদ্ধ। সে- সময় বিলোনিয়ার বিভিন্ন স্থানে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ কয়েকটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটি। ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা নোয়াপাড়ায় ছিল শহীদুল ইসলামের দলটি। ৩রা জুন পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ চালালে প্রায় ৬০ জনের অধিক পাকিস্তানি সেনা নিহত হয় এবং তারা পিছু হটে। ৭ই জুন তারা আবার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ করে এবং এবারও মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণে প্রায় ৫০ জনের অধিক পাকসেনা নিহত হয়। ১১ই জুন তারা আবার আক্রমণ করে। এবার তারা মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণে পিছু হটতে বাধ্য হয়। এরপর এ অঞ্চলে প্রায় প্রতিদিনই যুদ্ধ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান নাজুক হয়ে পড়ে। সাব-সেক্টর কমান্ডার জাফর ইমাম মুক্তিযোদ্ধাদের পশ্চাদপসরণের নির্দেশ দিয়ে বার্তা পাঠান। শহীদুল ইসলামের দলটি সময়তো বার্তা না পাওয়ায় তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে পড়েন। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা হেলিকপ্টার ও ট্যাংক নিয়ে আক্রমণ করে। শহীদুল ইসলাম তাঁর দল নিয়ে সাহসের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধ করে পিছু হটতে বাধ্য হন। ৭ই অক্টোবর ব্রিগেড আকারে ‘কে’ ফোর্স গঠন করা হলে শহীদুল ইসলাম ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ‘এ’ কোম্পানির অধিনায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার শহীদুল ইসলামকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে।
মুক্তিযুদ্ধ শেষে শহীদুল ইসলাম তাঁর কর্মস্থল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৯৩ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে উন্নীত হন। তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ রাইফেলস-এর পরিচালক, সিগন্যাল ব্রিগেড কমান্ডার ও ডাইরেক্টর সিগন্যাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি দুই কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম শায়মা শহীদ। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!