You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক মোহাম্মদ আমীর হোসেন

মোহাম্মদ আমীর হোসেন, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫৩) নৌকমান্ডো ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৩ সালের ১লা জানুয়ারি ফেনী সদর থানার ফরাদনগর ইউনিয়নের নৈরাজপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম দলিলুর রহমান এবং মাতার নাম শরবত বিবি। মোহাম্মদ আমীর হোসেন ১৯৬৯ সালে স্থানীয় স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ফেনী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি রাজনীতি-সচেতন ছিলেন। বাঙালিদের প্রতি অবাঙালিদের বৈষম্যমূলক আচরণে তিনি অন্য ছাত্র-যুবকদের মতো মনে- মনে প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধ ছিলেন। ৭১-এর মার্চে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করলে মোহাম্মদ আমীর হোসেন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
মোহাম্মদ আমীর হোসেন এপ্রিল মাসে শ্রীনগর সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। শ্রীনগর থেকে তিনি অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে হরিণা ক্যাম্পে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের নৌকমান্ডো দল গঠনের জন্য হরিণায় তখন রিক্রুটিং-এর কাজ চলছিল। মোহাম্মদ আমীর হোসেনকে নৌকমান্ডো দলে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মনোনীত করা হয়। এরপর হরিণা থেকে তাঁকে প্রথমে আগরতলায় এবং পরে কলকাতায় পাঠানো হয়। কিছুদিন পর অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তিনি কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ জেলার ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী পলাশিতে স্থাপিত নেভাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যান। এখানে ৩ মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে নৌকমান্ডোদের পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নৌবন্দরে অপারেশনের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২৭শে সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আমীর হোসেন চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে থাকা কয়েকটি জাহাজকে লক্ষ করে পরিচালিত অপারেশনে অংশ নেন। গভীর রাতে তাঁরা জাহাজগুলোতে বিস্ফোরক লাগানোর জন্য সমুদ্রে সাঁতার শুরু করেন। কিন্তু প্রবল জোয়ারের মুখে তাঁরা লক্ষ্যবস্তুর কাছে পৌঁছতে ব্যর্থ হন। অন্য ৩ জন কমান্ডোর সঙ্গে মোহাম্মদ আমীর হোসেন পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়েন। পাকসেনারা তাঁর ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। এক সময় তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হলে এখানেও তিনি শারীরিকভাবে নির্যাতিত হন। এতসব নির্যাতন সত্ত্বেও পাকসেনারা তাঁর কাছ থেকে তাদের কাঙ্ক্ষিত কোনো তথ্য পায়নি। স্বাধীনতার পর মোহাম্মদ আমীর হোসেন মুক্তিলাভ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মোহাম্মদ আমীর হোসেনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৯৩ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তিনি কুয়েত সেনাবাহিনীতেও চাকরি করেন। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সেখানে চাকরি করে পরের বছর তিনি দেশে ফিরে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পর ২০০৯ সালে তিনি কানাডায় যান। তিনি ৪ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম হোসনে আরা বেগম। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!