You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর বিক্রম মোহাম্মদ উল্লাহ

মোহাম্মদ উল্লাহ, বীর বিক্রম (১৯৩৯-১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৩৯ সালে যশোর সদর থানার রামনগর ইউনিয়নের সতিঘাটা বাজারের কামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম খলিলুর রহমান পাটোয়ারী এবং মাতার নাম আলীজান বানু। মোহাম্মদ উল্লাহ সতিঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন এবং কুয়াডা বাজার হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।
মোহাম্মদ উল্লাহ ১৯৬৮ সালে আনসার বাহিনীতে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)-এ সিপাহি পদে চুয়াডাঙ্গা হেডকোয়ার্টার্সে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে ইপিআর-এর হাবিলদার হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মোহাম্মদ উল্লাহ সুঠাম দেহ ও সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি খুবই সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষ ছিলেন। তিনি খেলাধুলা পছন্দ করতেন।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালিদের ওপর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালালে মোহাম্মদ উল্লাহ এর প্রতিবাদে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ২৬শে মার্চ কর্মস্থল ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধ পর্যায়ে তিনি কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ৮ নম্বর সেক্টরে অন্তর্ভুক্ত হন। এ সেক্টরের অধীনে তিনি ঝিনাইদহের বিষয়খালী, যশোরের চৌগাছা, মাগুরার মোহাম্মদপুর ইত্যাদি এলাকার কয়েকটি যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে অত্যন্ত সাহসিকতা ও রণনৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। মোহাম্মদ উল্লাহ ভারী অস্ত্র পরিচালনায় বিশেষভাবে দক্ষ ছিলেন।
নভেম্বর মাসের শেষের দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর থানা আক্রমণের সময় মোহাম্মদ উল্লাহ পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘটিত এক সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। তাঁর সঙ্গে এ যুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানার শহীদ নাগরীপাড়া গ্রামের দুই সহোদর আহমদ ও মোহাম্মাদও শহীদ হন। এ দুই সহোদরের সঙ্গে মোহাম্মদ উল্লাহকেও নাগরীপাড়ায় দাফন করা হয়। এ গ্রামে রয়েছে তাঁদের সমাধি ও স্মৃতিফলক।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার শহীদ মোহাম্মদ উল্লাহকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ১৯৬, খেতাবের সনদ নম্বর ১২১)। মুক্তেশ্বরী নদীর ওপর সতিঘাটা বাজারে নির্মিত একটি ব্রিজের নাম শহীদ মোহাম্মদ উল্লাহ-র নামে রাখা হয়েছে। তাঁর স্মৃতি রক্ষার জন্য সতিঘাটা গ্রামে শহীদ মোহাম্মদ উল্লাহ স্মৃতিসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ব্যক্তিজীবনে তিনি তিন পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম জাহানার বেগম (প্রয়াত)। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!