You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক মোহম্মদ সোমা মিঞা

মোহম্মদ সোমা মিঞা, বীর প্রতীক (১৯২৯-২০০৩) সুবেদার, ৩নং সেক্টর ও ‘এস’ ফোর্সের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯২৯ সালের ২২শে জুলাই লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলাধীন টাঘটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুর রহমান ও মাতার নাম তড়িবাজান বানু।
মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে সোমা মিঞা সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গলে জয়দেবপুর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন।
৭০-এর নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ- বিজয়ী হওয়ার পরও পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কর্তৃক ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেয়া, ৭ই মার্চের ভাষণে বাঙালিদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলন-এর ডাক ও শত্রুর মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ ইত্যাদি ঘটনা সোমা মিঞাকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে উদ্দীপ্ত করে। ৭১-এর ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি ও বাঙালি সামরিক-আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের ওপর আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়লে সঙ্গে-সঙ্গে মেজর সফিউল্লাহর নেতৃত্বে সোমা মিঞা বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। সফিউল্লাহর নির্দেশে প্রতিরোধ সংগ্রামে সেনা বিন্যাসের অংশ হিসেবে ক্যাপ্টেন নাসিমের নেতৃত্বে ২য় ইস্ট বেঙ্গলের একটি প্লাটুন ও কিছু মুজাহিদ আশুগঞ্জে নিয়োজিত হয়। সোমা মিঞা তাঁদের মধ্যে ছিলেন। মেঘনার আশুগঞ্জ তীরে পদাতিক বাহিনীর চলাচল সম্ভব ছিল বলে ক্যাপ্টেন নাসিমের নেতৃত্বে ২য় বেঙ্গলের একটি কোম্পানিকে আশুগঞ্জ রেল স্টেশনের পাশে মোতায়েন করা হয়। ১৪ই এপ্রিল পাকবাহিনী মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা আশুগঞ্জের লালপুর ও ভৈরবের ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করে। একই সঙ্গে শুরু হয় হেলিকপ্টার থেকে গোলাবর্ষণ। ক্যাপ্টেন নাসিম তাঁর বাহিনীকে পুনঃসংগঠিত করে অগ্রসরমাণ শত্রুসেনার বিরুদ্ধে তীব্র লড়াইয়ে লিপ্ত হন। এক পর্যায়ে তা হাতাহাতি যুদ্ধে রূপ নেয়। শত্রুসেনাদের অনেকেই হতাহত হয়। এ যুদ্ধে সোমা মিঞা ক্যাপ্টেন নাসিমের সঙ্গে সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ক্যাপ্টেন নাসিম ও ক্যাপ্টেন মোরশেদ এ যুদ্ধে আহত হন। পরবর্তীতে মাধবপুরের যুদ্ধেও সোমা মিঞা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, কিন্তু মাধবপুর শত্রুদের দখলে চলে যায়। এরপর পাকসেনারা ইটাখোলা চুনুরঘাট রাস্তা উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যায়। তাদের সামনে একমাত্র প্রতিবন্ধকতা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের তেলিয়াপাড়া হেডকোয়ার্টার্স। শত্রুর হাত থেকে তেলিয়াপাড়া রক্ষার যুদ্ধেও সোমা মিঞা অংশগ্রহণ করেন এবং সাহসী ভূমিকা পালন করেন, যদিও তেলিয়াপাড়া শেষ পর্যন্ত রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ ও বীরোচিত ভূমিকা পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মোহম্মদ সোমা মিঞা-কে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম খায়েরের নেছা। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!