You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক মোহাম্মদ আইনউদ্দিন - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক মোহাম্মদ আইনউদ্দিন

মোহাম্মদ আইনউদ্দিন, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৫) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৫ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সুরুজ আলী এবং মাতার নাম চান বানু। তিনি ১৯৫৯ সালে নবীনগর হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালে এবোটাবাদের কাকুলস্থ পাকিস্তান মিলিটারি একডেমি থেকে সফলতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে তিনি কমিশন প্রাপ্ত হন এবং লাহোর সেনানিবাসে পোস্টিং পান।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে মোহাম্মদ আইনউদ্দিন ক্যাপ্টেন পদে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্বিচার গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করলে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে পালিয়ে আসেন এবং ২৭শে মার্চ তাঁর রেজিমেন্টের সঙ্গে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন। খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি প্রতিরোধযুদ্ধ পরিচালনা করেন। ১৮ই এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গঙ্গাসাগরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানের ওপর ত্রিমুখী আক্রমণ করে। আইনউদ্দিন ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে দারুইন গ্রামে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে যুদ্ধরত আলফা কোম্পানির বীর মুক্তিযোদ্ধা সিপাহি মোস্তফা কামাল, বীরশ্রেষ্ঠ— শত্রুসেনাদের গুলিতে শহীদ হন। পরবর্তীতে সেক্টরভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মোহাম্মদ আইনউদ্দিন ২নং সেক্টরের গঙ্গাসাগর সাব-সেক্টরের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ৭ই অক্টোবর ব্রিগেড আকারে ‘কে’ ফোর্স গঠিত হলে তিনি নবম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর একটি ইউনিটকে তাঁর রেজিমেন্টের অধীনস্থ করা হয়। তাঁর নেতৃত্বে এ যৌথবাহিনী ৮ই ডিসেম্বর কুমিল্লা থেকে পাকিস্তানি সেনাদের হটিয়ে কুমিল্লা মুক্ত করে। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মোহাম্মদ আইনউদ্দিনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি তাঁর কর্মস্থল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১৯৯২ সালে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। ২০০০ সালে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর থেকে তিনি নর্থ সাউথ ও সিটি ইউনিভার্সিটির পরিচালনা ও পাঠদানের কাজে নিয়োজিত আছেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম নাজমা আক্তার চৌধুরী। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড