বীর উত্তম মোহাম্মদ আজিজুর রহমান
মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, বীর উত্তম (জন্ম ১৯৪৫) বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৪৫ সালের ১লা জানুয়ারি সিলেট জেলার বিয়ানীবাজারে তাঁর জন্ম। পিতার নাম আলহাজ্জ্ব শরাফত আলী এবং মাতার নাম মহিবুন্নেসা। পিতার চাকরিসূত্রে আজিজুর রহমানের শৈশব ও কৈশোর কাটে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও সিলেটে এবং এসব স্থানেই তাঁর পড়াশুনা চলে। তিনি ১৯৫৯ সালে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৬২ সালে সিলেটের এম সি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৬৫ সালে ঢাকার তদানীন্তন জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৬ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে (কাকুল) ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালে মিলিটারি একাডেমিতে সফলভাবে কোর্স সমাপ্তির পর তিনি কমিশন প্রাপ্ত হয়ে লাহোরে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে আজিজুর রহমান ক্যাপ্টেন পদে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে জয়দেবপুর ক্যাম্পে কর্মরত ছিলেন। ১৯শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী এ রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার অপচেষ্টা চালায়। এ-সময় আজিজুর রহমান রেজিমেন্টের এডজুট্যান্টের দায়িত্ব পালন করছিলেন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি রেজিমেন্টের সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে সিলেট বিমান বন্দর, সুরমা নদীর ওপর কীনব্রিজ, লামা বাজার, সাদীপুর, শেরপুর, শ্রীমঙ্গল, কালেঙ্গা রিজার্ভ ফরেস্ট ও রেমা চা-বাগান যুদ্ধে আজিজুর রহমান অসাধারণ বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। ২৬শে এপ্রিল শেরপুরের কুশিয়ারা নদীর তীরে যুদ্ধ পরিচালনার সময় তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন এবং কালীঘাট চা-বাগান হাসপাতাল ও পরে আগরতলার জি বি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ই এপ্রিল সিলেট শহরের সুরমা নদীর ওপর কীনব্রিজের যুদ্ধে তাঁর বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করে।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আজিজুর রহমান পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পদোন্নতি পেয়ে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। সেনাবাহিনী ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ রাইফেলস-এর মহাপরিচালক, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বাহরাইনে অবস্থিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম সেলিনা আজিজ। [সাজাহান মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড