বীর প্রতীক মোফাজ্জেল হোসেন
মোফাজ্জেল হোসেন, বীর প্রতীক (১৯৩৫-২০০৬) লেফটেন্যান্ট, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অপারেশন জ্যাকপট-এ অংশগ্রহণকারী নৌসেনা। তিনি ১৯৩৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ‘নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. তোফাজ্জেল হোসেন ও মাতার নাম জোবেদা খাতুন।
মোফাজ্জেল হোসেন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দিয়ে তাঁর চাকরি জীবন শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে তিনি পাকিস্তানের বিভিন্ন নৌঘাঁটিতে দায়িত্ব পালন করেন। ৭১-এর জানুয়ারি মাসে ছুটি নিয়ে তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর তিনি দেশমাতৃকার টানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিছুদিন পর তিনি ভারতে চলে যান। প্রশিক্ষিত নাবিক হিসেবে তিনি ভারতের পলাশিতে নৌকমান্ডোর প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে তিনি বিভিন্ন স্থানে অপারেশনে অংশ নেন।
৮ই আগস্ট তিনি ভারতের হরিণা থেকে একদল নৌকমান্ডো সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন এবং ১৩ই আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের নির্দিষ্ট গন্তব্যে এসে অবস্থান নেন। এরপর এ ডব্লিউ চৌধুরী, বীর উত্তম, বীর বিক্রমএর নেতৃত্বে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ই আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে নৌ অভিযান পরিচালনা করেন। একই সময়ে নৌকমান্ডোরা মংলা, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং একদিন পর দাউদকান্দি বন্দরে নৌ অপারেশন পরিচালনা করেন, যা অপারেশন জ্যাকপট নামে খ্যাত। মোফাজ্জেল হোসেন তাঁর কমান্ডো দলের সহযোগিতায় ১৫ই আগস্ট বর্ষণমুখর অন্ধকার রাতে কর্ণফুলী নদী সাঁতরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর জাহাজে লিমপেট মাইন সেট করে তা ধ্বংস করে দেন। তাঁদের এ সফল অপারেশনে ঐ রাতে চট্টগ্রামেই পাকিস্তানি বাহিনীর ৯টি জাহাজ ও অন্যান্য নৌযান ধ্বংস হয়। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং পাকিস্তান সরকারের ভিত কেঁপে ওঠে। অপারেশনের পর কমান্ডোরা ভারতে ফিরে যান। কিছুদিন পর পুনরায় ১২ জনের একটি দল নিয়ে মোফাজ্জেল হোসেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন।
অক্টোবর মাসে তাঁরা ভারতের মেঘালয় থেকে লঞ্চযোগে চিলমারী বন্দরে অপারেশনের জন্য আসেন। কিন্তু নদীতে প্রবল স্রোত থাকায় অপারেশন পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদান ও বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার মোফাজ্জেল হোসেনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চাকরিতে বহাল হন। লেফটেন্যান্ট হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে তিনি ১৯৮৭ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম কোহিনুর বেগম। এ দম্পতি ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক-জননী। তিনি ২০০৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড