মোবারকপুর গণহত্যা (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)
মোবারকপুর গণহত্যা (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংঘটিত হয় ৬ই অক্টোবর। গণহত্যার স্থানটি শিবগঞ্জ উজেলার অধীন। এখানকার আদিনা কলেজে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্যাম্প ছিল। ১লা আগস্ট পাকসেনারা এ ক্যাম্পটি আক্রমণ করতে গেলে চরমভাবে পরাজিত হয়। এরপর আগস্টের মাঝামাঝি কলাবাড়ি, বাজিতপুর পূর্বপাড়া, শরত্নগর, দুর্লভপুর, পারকালপুর, উজিরপুর, দোরশিয়া প্রভৃতি স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা আরো কয়েকটি ক্যাম্প স্থাপন করেন। ফলে পাগলা নদীর পশ্চিম অঞ্চল এবং শিকারপুরের পানি নিষ্কাশন প্রণালীর উত্তর অঞ্চল পুরোপুরি মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। কিন্তু তখন এ এলাকা ছিল বন্যাকবলিত। তাই বন্যার পানি না সরা পর্যন্ত পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনার সাহস করেনি। ৬ই অক্টোবর তারা উপর্যুক্ত ক্যাম্পসমূহে আক্রমণ চালায়। এ-সময় আব্দুল আহাদ ও মিনুসহ বেশ কয়েকজন রাজাকার নিয়ে একদল পাকসেনা ত্রিমোহিনী-মায়দা- গুয়াবাড়ি-চাঁদপুর হয়ে মোবারকপুরের দিকে অগ্রসর হয়। গুয়াবাড়ি-চাঁদপুর ও মোবারকপুরের মাঝখানে ছিল একটি জলাভূমি। হানাদার বাহিনী জলাভূমির পূর্বপাড়ে পৌঁছে দেখে একজন লোক নৌকায় চড়ে মাছ ধরছে। তারা তাকে নৌকা ভেড়াতে বললে সে ভয়ে নৌকা নিয়ে অপর পাড়ে চলে যায়। এ-সময় দুজন রাজাকার সাঁতরে গিয়ে নৌকা নিয়ে এসে সকলকে পার করে। মাছধরা লোকটির কাছে মিলিটারি আসার খবর পেয়ে গ্রামের লোকজন আত্মগোপনে চলে যায়। কেবল কশিমুদ্দিন মণ্ডল ও তার পরিবারের লোকজন বাড়িতে থাকে। তার চাচা ছিল শান্তি কমিটির সদস্য। তাছাড়া, সে নিজে ছিল পিডিপি নেতা মমতাজ উদ্দিন আহমদ মিয়া (রাজশাহী-৪ আসন থেকে নির্বাচিত মো. খালেদ আলী মিয়া এমএনএ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতে চলে গেলে তাঁর শূন্য আসনে ইয়াহিয়া সরকারের প্রহসনমূলক নির্বাচনে নির্বাচিত এমএনএ)-র একজন অনুগত কর্মী। তাই পাকসেনা আসার খবরে খুশি হয়ে সে পরিবার-পরিজন নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে স্লোগান দেয়। কিন্তু পাকসেনারা তাকে বিশ্বাস করেনি। তারা কশিমুদ্দিন মণ্ডল, তার দুই ছেলে সেকান্দার আলী ও মো. সোলায়মান চেনু, জামাতা আব্দুল মজিদ, বাড়ির কাজের লোক জবেদ আলী (পিত মো. সাইফুদ্দিন) এবং তার প্রতিবেশী সোহরাব আলী (পিতা মো. রিয়াজ উদ্দীন)-কে বাড়ির উঠানে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে। সোহরাব আলী ছাড়া বাকি সবাই সঙ্গে-সঙ্গে মারা যায়। অন্য একটি বাড়িতে গুদড় আলী নামে একজনকে গুলি করে। সঙ্গে-সঙ্গে সে মারা যায়। পাকসেনারা হত্যাকাণ্ড শেষ করার পর কয়েকটি বাড়িতে আগুন দেয়। এরপর তারা ধোবড়ার দিকে চলে যাওয়ার সময় ওপর টোলার নেশ মোহাম্মদের পুত্র মো. ইদ্রিশ আলীকে গুলি করে হত্যা করে। হানাদাররা চলে যাওয়ার পর গ্রামের লোকজন ফিরে এসে কশিমুদ্দিন মণ্ডলের বাড়িতে নিহতদের তার পারিবারিক গোরস্থানে এবং গুদড় আলীকে তার জমিতে কবর দেয়। [তামিজ উদ্দীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড