You dont have javascript enabled! Please enable it!

মোমতাজ পাগলা অপারেশন (ভৈরব, কিশোরগঞ্জ)

মোমতাজ পাগলা অপারেশন (ভৈরব, কিশোরগঞ্জ) পরিচালিত হয় ৪ঠা জুলাই। মোমতাজ পাগলা ছিল কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলায় পাকবাহিনীর শীর্ষ দালাল। তার অতিমাত্রায় পাকিস্তানপ্রীতির কারণে স্থানীয় সবাই তাকে ‘মোমতাজ পাগলা’ বলে ডাকত। বাঙালিদের স্বার্থের বিরুদ্ধে তার ভূমিকা খুবই ছিল ন্যক্কারজনক। হানাদার বাহিনীর মিত্র হিসেবে সে তখন ভৈরবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। পাকবাহিনীকে দিয়ে সে বহু বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করিয়েছে, বাড়িঘর পুড়িয়ে বহু হিন্দু মহাজনের বাড়ি-গদি-গুদাম দখল করেছে। তাই ভৈরবকে গণহত্যা ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পাকিস্তানের এই দালালকে হত্যা করা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। এ লক্ষ্যে তাঁরা রায়পুরা থানাধীন নারায়ণপুর সরাফত উল্লাহ হাইস্কুল মাঠে বসে পরিকল্পনা করেন। মূল পরিকল্পনায় ছিলেন ফখরুল আলম আক্কাছ এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা আতিকুর রহমান আতিক। তাঁর সহযোগী ছিলেন নূরুল হক নূরু ও মোহন মিয়া অপারেশনের মূল পরিকল্পনা ছিল— আতিক ভৈরব বাজারস্থ মোমতাজ পাগলার গদিঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে প্রথমে ব্রাশফায়ার করবেন এবং তাঁর ইঙ্গিতে নূরু গদিঘরের ভেতরে গ্রেনেড ছুড়ে মারবেন। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য মোহন স্টেনগান নিয়ে রাস্তায় পাহারা দেবেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ঠা জুলাই আতিক ও তাঁর সহযোদ্ধারা সবজি বিক্রেতার ছদ্মবেশে ভৈরব বাজারে প্রবেশ করেন। মোমতাজ পাগলা তখন বাজারের ‘ছবিঘর’ সিনেমা হলের বিপরীতে তার গদিঘরে বসে কয়েকজন সঙ্গীর সঙ্গে আলাপ করছিল। আতিক ও তাঁর সহযোদ্ধারা অপারেশানের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। তারপর পরিকল্পনা অনুযায়ী আতিক প্রথমে মোমতাজ পাগলা ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এরপর নূরু গ্রেনেড ছুড়ে মারেন। কিন্তু গ্রেনেডটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় তার বিস্ফোরণে আতিক ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং নূরু নিজে গুরুতর আহত হন। তখন মোহন ছুটে এসে আতিকের লাশ নিয়ে ১০০ গজ যেতেই বুঝতে পারেন যে, লাশ নিয়ে পালানো সম্ভব নয়। তাই রাস্তার পাশে আতিকের লাশ রেখে তিনি নূরুকে নিয়ে দ্রুত সরে পড়েন। কিছুদূর যাওয়ার পর নূরুকে পরিচিত কারো বাসায় আত্মগোপনের পরামর্শ দিয়ে তিনি দ্রুত পালিয়ে যান। কিন্তু নূরু পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন এবং পরবর্তীতে দালালরা তাকে হত্যা করে। এই দুই শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে ভৈরব পৌর ভবনে প্রতিষ্ঠিত পৌর পাঠাগারের নামকরণ করা হয় ‘শহীদ আতিক-নূরু পৌর পাঠাগার’।
এদিকে আতিকের ব্রাশফায়ারে মোমতাজ পাগলাসহ তার সাঙ্গোপাঙ্গরা নিহত হয়। তার সঙ্গে ভৈরবপুর গ্রামের হাফিজ উদ্দিন মিয়ার বড় ছেলে ধন মিয়া ও তার মেয়ের জামাই বাবু মিয়া এবং মধ্যেরচর ও নিলিক্ষা গ্রামের দুজন নিহত হয়। [ইমরান হোসাইন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!