বীর প্রতীক মোশাররফ হোসেন
মোশাররফ হোসেন, বীর প্রতীক (১৯৫২-১৯৮৯) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫২ সালের ১লা জানুয়ারি নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার ভীমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভীমপুর গ্রাম চাটখিল শহর থেকে ২ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। তাঁর পিতার নাম মোবারক উল্লাহ এবং মাতার নাম আম্বিয়া খাতুন। তিনি চাটখিল হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং ছাত্রলীগ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গণহত্যা চালায়, মোশাররফ হোসেন তা স্বচক্ষে দেখেন। এ বীভৎস স্মৃতি নিয়ে তিনি ২৫শে মার্চের পর নিজ এলাকা চাটখিলে চলে যান। সেখানে গিয়ে প্রথমে নিজে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ছাত্র-তরুণদের সংগঠিত করে তাদের যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেন এবং অনেককে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।
সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য মোশাররফ হোসেন ভারতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ২ নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাব-সেক্টরে যোগ দেন। এ সাব-সেক্টরের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম, বীর বিক্রম, ক্যাপ্টেন ইমাম- উজ-জামান, বীর বিক্রম ও ক্যাপ্টেন শহীদুল ইসলাম, বীর প্রতীকএর অধীনে ও নির্দেশে তিনি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। ‘কে’ ফোর্স গঠিত হলে মোশাররফ হোসেন এর সঙ্গে যুক্ত হন। তাঁকে আর্টিলারি বাহিনীর মুজিব ব্যাটারির ওপি (ওবজারভেশন পোস্ট) নিযুক্ত করা হয়। তিনি শত্রুবাহিনীর অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে ম্যাপ তৈরি করতেন। এ ম্যাপ দেখে অপারেশনের পরিকল্পনা করা হতো। অনেক সময় মোশাররফ হোসেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাছের ওপর উঠে কিংবা শত্রুদের অতি কাছাকাছি গিয়ে তাদের অবস্থানের তথ্য সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রদান করতেন। তাঁর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শত্রুদের ওপর আক্রমণ করা হতো।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মোশাররফ হোসেনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ৪১০, খেতাবের সনদ নম্বর ১৬০)।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে যোগদান করেন। একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কর্মক্ষেত্রে তিনি অন্য সহকর্মী ও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সম্মান ও সহযোগিতা পান। তিনি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক পদে উন্নীত হন। চাকরিরত অবস্থায় ১৯৮৯ সালের ১৩ই ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মোশাররফ হোসেন ব্যক্তি জীবনে ১ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম জাহেদা খাতুন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে ঢাকার রায়ের বাজারে বসবাস করছেন। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড