মোড়েলগঞ্জ গণহত্যা (মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট)
মোড়েলগঞ্জ গণহত্যা (মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট) সংঘটিত হয় ১১ই মে। এতে বহু সাধারণ মানুষ শহীদ হন। ঘটনার দিন পাকহানাদার বাহিনী, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী মোড়েলগঞ্জ থানা সদরে ব্যাপক গণহত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন করে। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে নিরীহ মানুষজনকে ধরে এনে মোড়েলগঞ্জ টার্মিনাল ও নদীর পাড়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যার পর নদীতে ফেলে দেয়। তারা মোড়েলগঞ্জ বাজার এবং আশপাশের সমস্ত দোকানপাট লুট করে। এরপর বাজারের ৩ শতাধিক দোকানপাট ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহম্মেদ মধুর বাড়ি এবং লিয়াকত আলী খানের দোকান ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা অসংখ্য নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। সানকিভাঙ্গার দালাল মোজাফফার হাওলাদার দুজন যুবতী মেয়েকে হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। এদিন পাকহানাদার বাহিনী মোড়েলগঞ্জ বাজারে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়। হানাদাররা শেরেস্তাদার বাড়ির ভেতরে কয়েকটি ঘরে লোকজন ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে অনেক লোক আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করে। তারা ভূঁইমারী বাড়ির হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক লোককে ধরে এনে হত্যা করে। এরপর রাধেশ্যাম নামে অপর একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে ধরে এনে মোড়েলগঞ্জ টার্মিনালে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। হানাদাররা লোকজনকে যেখানে যেভাবে পেয়েছে সেখানেই তাদেরকে গুলি করে হত্যা করেছে। গণহত্যায় শহীদদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন— শান্তিরঞ্জন দাস (পিতা রাধেশ্যাম দাস, অগ্রণী ব্যাংক রোড, বারইখালী), চিত্তরঞ্জন দাস (অগ্রণী ব্যাংক রোড, বারইখালী), মকবুল (অগ্রণী ব্যাংক রোড, বারইখালী), আব্দুর রহমান খান (মোড়েলগঞ্জ), আব্দুল মজিদ ডাক্তার (মোড়েলগঞ্জ), আবু বকর ছিদ্দিক তালুকদার (পিতা ইউছুফ আলী তালুকদার (মোড়েলগঞ্জ), মো. মারুফ হোসেন (পিতা আব্দুল রহমান, মোড়েলগঞ্জ), শরৎ চন্দ্র সাহা (মোড়েলগঞ্জ), সাহেব আলী (পিতা ছন্দার আলী তালুকদার, ভাইজোড়া), আব্দুল কুদ্দুস (পিতা খালেক, সুতালড়ি), শাহাব উদ্দীন হাওলাদার (সুতালড়ি), আতাহার আলী (পিতা মেনাজ উদ্দীন কাজী, বারইখালী), ইউসুফ শেখ (পিতা আমিন উদ্দিন, তেলীগাতি), ইসমাইল শেখ (পিতা আব্দুল শেখ, তেলীগাতি) এবং গোরাচাঁদ বসু (পিতা অমরেন্দ্র বসু, পুরাতন বাজার, বাগেরহাট)। পানগুছি নদীর পাড়ে ছোলমবাড়িয়া খেয়াঘাটে ২০১৩ সালে শহীদদের স্মরণে একটি ভাস্কর্য নির্মিত হয়। [শেখ মশিউর রহমান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড