You dont have javascript enabled! Please enable it!

মোড়েলগঞ্জ রাজাকার ক্যাম্প যুদ্ধ (মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট)

মোড়েলগঞ্জ রাজাকার ক্যাম্প যুদ্ধ (মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট) সংঘটিত হয় ১৭ই মে। এতে ৪ জন রাজাকার নিহত ও ১০০ জন বন্দি হয়। অপরদিকে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ২ জন আহত হন। রাজাকারদের শতাধিক রাইফেল ও প্রচুর গোলা-বারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
১১ই মে মোড়েলগঞ্জ থানা সদরের বারইখালী ইউনিয়ন কাউন্সিলের দোতলা ভবনে সর্বপ্রথম রাজাকার ক্যাম্প স্থাপিত হয়। ১৭ই মে রাতে মুক্তিযোদ্ধারা মোড়েলগঞ্জ রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহম্মেদ মধু তাঁর বাহিনী নিয়ে রাত ১টার দিকে মোড়েলগঞ্জ পৌঁছে কমান্ড পোস্ট নির্ধারণ করেন। মুক্তিযোদ্ধারা তিন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এ আক্রমণ পরিচালনা করেন। প্রথম গ্রুপে কবির আহম্মেদ মধু, দ্বিতীয় গ্রুপে খালিদ হোসেন এবং অপর গ্রুপে লিয়াকত আলী খানকে আক্রমণ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব নিয়ে কমান্ডারগণ যাঁর-যাঁর সুবিধামতো স্থানে রাজাকার ক্যাম্পকে টার্গেট করে অবস্থান নেন। রাত ৩টার দিকে ক্যাম্পের ভেতর থেকে টর্চের আলো আসতে দেখে লিয়াকত আলী খান গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান ঐ আলো লক্ষ করে প্রথম গুলি চালান। সঙ্গে-সঙ্গে তিনদিক থেকে রাজাকার ক্যাম্পের দোতলা দালানের দরজা লক্ষ করে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি ছুড়তে শুরু করেন। গুলিতে দালানের দরজা-জানালা ভেঙ্গে পড়ে। রাজাকাররা দরজা-জানালা দিয়ে গুলি চালাবার কোনো সুযোগ না পেয়ে ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর কিছু গুলি চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলির তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে শত্রুপক্ষ গুলি করা বন্ধ করে দেয় ভোরবেলা কবির আহম্মেদ মধুর নির্দেশে রাজাকার ক্যাম্পের ভেতরে ককটেল চার্জ করার সিদ্ধান্ত হয়। তাঁর পাশে অবস্থানরত আবুবকর ছিদ্দিক নামে এক তরুণ মুক্তিযোদ্ধা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ দায়িত্ব পালন করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু কবির আহম্মেদ মধু তাঁকে ককটেল দিতে প্রথমে সম্মত হননি। কারণ তরুণ আবুবকরের ভালো প্রশিক্ষণ ছিল না। কিন্তু আবুবকরের পীড়াপীড়িতে আহম্মেদ মধু তাঁকে ককটেল চার্জ করার অনুমতি দেন। অসীম সাহসী আবুবকর ককটেল নিয়ে রাজাকারদের অবস্থান নেয়া বিল্ডিং-এর কাছে গিয়ে ককটেল চার্জ করেন। এতে রাজাকার ক্যাম্পের ভেতরে আগুন ধরে যায়। ককটেল ব্লাস্ট করে আবুবকর নিজ অবস্থানে গিয়ে একটি বালুর স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে রাজাকার ক্যাম্পের ভেতরের দৃশ্য দেখছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পরাস্ত রাজাকাররা এ-সময় রাইফেল ফেলে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করছিল। হঠাৎ একটি গুলি আবুবকরের মাথায় এসে লাগে। এতে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে শহীদ হন। এমন সময় একটি লঞ্চ মোড়েলগঞ্জ থানার সামনে এসে ভেড়ে। আবুবকরের মৃত্যু এবং লঞ্চ ভিড়তে দেখে মুক্তিযোদ্ধারা অনুমান করেন তাঁরা হয়তো অন্যদিক থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই কমান্ডার মধু মুক্তিযোদ্ধাদের পজিশন প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন। কবির আহম্মেদ মধু, লিয়াকত আলী খান এবং খালিদ হোসেন গুলি করতে-করতে বাজারের ভেতরে চলে যান। বাকিরা নৌকা নিয়ে নদীর পূর্ব পাড়ে সরে পড়েন। এই সুযোগে রাজাকার সদস্যদের সকলে লঞ্চে উঠে বাগেরহাটের দিকে চলে যায়। এর কয়েক দিন পর পাকবাহিনী খাউলিয়া ক্যাম্প আক্রমণ করে। সেখানে তারা কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে না পেয়ে স্থানীয় অধিবাসীদের ঘর-বাড়িতে আগুন লাগায়।
১৭ই মে মোড়েলগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের মধ্যে প্রথম যুদ্ধের পর মোড়েলগঞ্জে রাজাকারের অবস্থান এবং পাকহানাদার বাহিনীর কোনো তৎপরতা ছিল না। এ অবস্থায় মুক্ত এলাকা হিসেবে জনসাধারণ মোড়েলগঞ্জে বসবাস করতে থাকে। মে মাসের শেষদিকে রাজাকার ও পাকমিলিশিয়া বাহিনীর একটি বড় দল দ্বিতীয়বারের মতো দালাল মাওলানা ইউসুফ এবং বাগেরহাটের রাজাকার মেজর রজ্জব আলী ফকিরের নেতৃত্বে মোড়েলগঞ্জ থানা সদরে এসে পৌঁছে। তারা এখানে ৪টি রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে। অতঃপর স্বাধীনতাবিরোধীরা গণহত্যা, লুটপাট ও নারীধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। আগস্ট মাসের প্রথম দিকে রাজাকার বাহিনী হোগলাবুনিয়া গ্রামের বাছার বাড়িতে গিয়ে ৮ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এসব খবর সুন্দরবনে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধদের সাব- সেক্টর কার্যালয়ে পৌঁছায়। মোড়েলগঞ্জের ৪টি রাজাকার ক্যাম্প বেশ সুরক্ষিত ছিল এবং তারা সংখ্যায় ছিল বহু। এ- সময় মুজিবনগর সরকার-এর আদেশ অমান্য করে মোড়েলগঞ্জ এ সি লাহা হাইস্কুলে রাজাকারদের পাহারায় এসএসসি পরিক্ষা নেয়া হচ্ছিল। পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত কয়েকজন শিক্ষক পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে বেশ উৎসাহী ছিল। এসব ঘটনা প্রতিহত করার জন্য সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন তাঁর অধীনস্থ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের নিয়ে সম্মেলন ডাকেন। সম্মেলনে কমান্ডার আহম্মেদ মধুর প্রস্তাবে মোড়েলগঞ্জে অবস্থানরত ৪টি রাজাকার ক্যাম্প একযোগে আক্রমণের সিদ্ধান্ত হয়। আক্রমণের তারিখ ও কৌশল নির্ধারণ করা হয়। কৌশল অনুযায়ী মেজর জিয়াউদ্দিন ১৫ই আগস্ট ১২০ জন বীর গেরিলা যোদ্ধা নিয়ে সুন্দরবন থেকে ভোলা নদী পার হয়ে ধানসাগর এলাকায় পৌঁছান। অপারেশন কমান্ডার কবির আহম্মেদ মধু মুক্তিযোদ্ধাদের দায়ীত্বের কথা তাঁদের স্মরণ করিয়ে দেন। তারপর তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল ও উপদলে বিভক্ত করে দুজন অপারেশন কমান্ডারের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন। কবির আহম্মেদ মধু তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে মোড়েলগঞ্জ থানা সংলগ্ন ইউনিয়ন কাউন্সিলে অবস্থানরত পাকমিলিশিয়া বাহিনী, সুকুমার রায়ের বাড়িতে অবস্থানরত ক্যাম্প এবং কবিরাজ বাড়ির রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের দায়িত্ব নেন। অপরদিকে আব্দুল হাই খোকন তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে এ সি লাহা হাইস্কুল ক্যাম্প ও কুঠিবাড়ি ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। অপারেশন কমান্ডার, প্লাটুন কমান্ডার, ও গ্রুপ কমান্ডারগণ সকলে যাঁর যাঁর দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পর ধানসাগর থেকে মেজর জিয়াউদ্দিনের নির্দেশে মোড়েলগঞ্জের পথে যুদ্ধযাত্রা করেন। রাত ২টার দিকে সকল কমান্ডার মোড়েলগঞ্জ টাউন স্কুল মাঠে পৌঁছান। এরপর যার-যার লক্ষ্যস্থলে অবস্থান গ্রহণ করেন। মোড়েলগঞ্জ এস এম কলেজকে মূল কমান্ড পোস্ট হিসেবে নির্বাচন করে মেজর জিয়াউদ্দিন ২০ জন রিজার্ভ গেরিলাসহ অবস্থান গ্রহণ করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন শামছুল আলম তালুকদার এবং লিয়াকত আলী খান। নির্দেশ ছিল কবির আহম্মেদ মধু যখন কবিরাজ বাড়ি রাজাকার ক্যাম্পের ওপর ফায়ার ওপেন করবেন, তখন সকল কমান্ডার নিজ-নিজ লক্ষ্যস্থলে আঘাত হানবেন। রাত ৩টার দিকে কমান্ডার মধু ফায়ার ওপেন করার সঙ্গে-সঙ্গে সকল সহযোদ্ধা ফায়ার শুরু করেন। শত্রুদের প্রত্যেকটি অবস্থানের ওপর একযোগে অবিরাম গুলি চলতে থাকে। শত্রুপক্ষ থেকেও পাল্টা গুলি চলে। আব্দুল হাই খোকনও এ সি লাহা স্কুলে রাজাকারদের লক্ষ্য করে একইভাবে গুলি চালাতে থাকেন। কিন্তু কুঠিবাড়ির রাজাকাররা স্কুলের দিকে প্রবল গুলি বর্ষণ করতে থাকলে আব্দুল হাই খোকনের দল বেকায়দায় পড়ে যায়। বিষয়টি মেজর জিয়াউদ্দিন উপলব্ধি করেন এবং খোকনের কমান্ডস্থানে পৌঁছে যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফায়ারিং পয়েন্ট পরিবর্তন করে পুনরায় আক্রমণ শুরু করেন। স্কুলের বিজ্ঞান ভবনের জানালা দিয়ে তখন রাজাকার বাহিনী পাল্টা গুলি চালাচ্ছিল। রাজাকাররা ভবনের মধ্যে থাকায় তাদের অবস্থান ছিল বেশ নিরাপদ। এভাবে রাতভর গুলি-পাল্টা গুলি চলতে থাকে। অবস্থানগত দুর্বলতার কারণে রাজাকারদের পরাস্ত করা যাচ্ছিল না, আবার বেশি সময় ধরে সেখানে অবস্থান করাও সমীচীন ছিল না। মুক্তিযোদ্ধাদের পজিশন থেকে ১০ হাত দূরে অবস্থিত পানগুছি নদী। কৌশলের আশ্রয় নিয়ে জিয়াউদ্দিনের সহমুক্তিযোদ্ধা স্কুল শিক্ষক নজরুল ইসলাম মূল ভবনের মধ্যে গ্রেনেড চার্জ করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা মুকুল কভারিং ফায়ারের পরিস্থিতির মধ্যে জানালা দিয়ে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত গ্রেনেড জানালার শিকে বাধাগ্রস্থ হয়ে উল্টো মুকুলের কাছে ফিরে এসে ব্লাস্ট হয়। এতে মুকুলের পায়ে মারাত্মক আঘাত লাগে। আঘাতে তিনি মাটিতে পড়ে যান ও উঠে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলেন। তাৎক্ষণিকভাবে জিয়াউদ্দিনের নির্দেশে সুরেন নামের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্রলিং করে মুকুলের কাছে পৌঁছে তাঁকে পিঠে করে নিয়ে এসে সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিনের সামনে রাখেন। তিনি মুকুলের প্রাথমিক চিকিৎসা করান। থানা ও বাজারের মুক্তিযোদ্ধাদের ক্লোজ করে এনে তিনি এ সি লাহা স্কুলের যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন করেন এবং তাঁদের এম্বুশ নিয়ে অপেক্ষা করার নির্দেশ দেন। যুদ্ধবিরতির এক পর্যায়ে সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ করেই পানগুছি নদীতে একটি নৌযানের শব্দ শোনা যায়। অনেক মুক্তিযোদ্ধা এটিকে গানবোটের শব্দ মনে করে আতঙ্কিত হন। দুদিক থেকে শত্রুবাহিনীর আক্রমণ হবার সম্ভাবনা ছিল। বিষয়টি মেজর জিয়াউদ্দিন বুঝতে পেরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যেক পজিশনের কাছে গিয়ে সকলকে সাহস দেন এবং বলেন তিনি গানবোট মোকাবেলা করবেন, তবে কোনো রাজাকার যাতে পালাতে না পারে সেদিকে তাঁদের লক্ষ্য রাখতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী খান এবং সামছুল আলম তালুকদারসহ জিয়াউদ্দিন নিজে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নদীর পাড়ে কচুক্ষেতের ভেতরে অবস্থান নেন। আগত নৌযানটি আসলে গানবোট ছিল না। এটি ছিল রায়েন্দা ক্যাম্প রাজাকারদের ব্যবহৃত লঞ্চ। যেহেতু মোড়েলগঞ্জ রাজাকার ক্যাম্প মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করেছেন, সেটি জানতে পেরেই রাজাকারদের সাহাযার্থে লঞ্চটি এসেছিল। মোড়েলগঞ্জের কাছাকাছি যখন লঞ্চটি আসে, তখন কোনো গুলির শব্দ ছিল না। তীরের কাছে আসামাত্র একসঙ্গে দুটি এলএমজি এবং ৬টি অটো রাইফেল দিয়ে জিয়া বাহিনী লঞ্চ লক্ষ করে গুলি চালায়। সঙ্গে-সঙ্গে লঞ্চটি পেছন দিকে ঘুরে এলাপাতাড়ি গুলি চালাতে-চালাতে রায়েন্দার দিকে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর উত্তর দিক থেকে আবার একটি নৌযানের শব্দ শোনা যায়। এটি ছিল গানবোট, যা বাগেরহাট থেকে আসছিল। অজানা কারণে মোড়েলগঞ্জ বন্দরের কাছে এসে পুনরায় গানবোটটি বাগেরহাটের দিকে ফিরে যায়। জিয়াউদ্দিন যখন লঞ্চ ও গানবোট প্রতিহত করার কাজে ব্যস্ত, তখন থানা ও বন্দর এলাকায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা কিছুক্ষণের জন্য যুদ্ধে বিরতি দিয়ে ঐ লঞ্চ ও গানবোটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। ঠিক সেই ফাঁকে বন্দরের ২টি ক্যাম্প, থানা এলাকার একটি ও কুঠিবাড়ি ক্যাম্পের রাজাকার ও মিলিশিয়া বাহিনী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের অনড় অবস্থানের কারণে এ সি লাহা স্কুল ভবনে অবস্থানরত রাজাকাররা পালাতে পারেনি। লঞ্চ তাড়িয়ে দেবার পর কমান্ডারের নির্দেশে আছাদ, হেলাল, সুশান্তসহ ৪-৫ জন মুক্তিযোদ্ধা অগ্রসর হয়ে জানালার পরিবর্তে ভেনটিলেটার দিয়ে পালাক্রমে ভবনের মধ্যে গ্রেনেড চার্জ করতে থাকলে রাজাকাররা মনোবল হারিয়ে আর্তনাদ করতে থাকে। গ্রেনেডের আঘাতে অনেক রাজাকার আহত হয়ে কাতরাচ্ছিল। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে দেখে জিয়াউদ্দিন পিস্তল হাতে বিজ্ঞান ভবনের সামনে যান এবং সংকেত পাওয়া মাত্র মুক্তিবাহিনী স্কুলের মধ্যে ঢুকে পড়ে ও দড়ি দিয়ে ১০০ জন রাজাকারকে বেঁধে ফেলে। তাদের স্কুলের কিছু দূরে রহমান খানের বাড়ির বাগানে নিয়ে বিচার করা হয়। বিচারে রাজাকারদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের মধ্যে এ সি লাহা স্কুলের ৪ জন শিক্ষক ছিল, যারা শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকার বাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করছিল। এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণে প্রধান শিক্ষক ওয়াহেদ মিয়াকে তারা বাধ্য করেছিল। স্কুল ভবনের মধ্যে ৪ জন রাজাকার গুলি ও গ্রেনেডের আঘাতে নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে ২ জন গুরুতর আহত হন। তাঁরা হলেন এ সি লাহা হাইস্কুলের বিএসসি শিক্ষক নজরুল ইসলাম মুকুল ও ভান্ডারিয়ার সোহরাব হোসেন। এ যুদ্ধে শতাধিক রাইফেল ও প্রচুর গোলা-বারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। কুঠিবাড়ি থেকে ২ জন রাজাকার পালিয়ে মাঠের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। স্থানীয় কৃষকরা তাদের পিটিয়ে হত্যা করে। অন্য একজন রাজাকার রাইফেল নিয়ে পালাচ্ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে পড়ামাত্র সে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়। এ যুদ্ধের পর মোড়েলগঞ্জ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহম্মেদ মধু ও তাঁর বাহিনী পাকবাহিনী ও রাজাকারদের নিকট আতঙ্কে পরিণত হয়। [শেখ মশিউর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!