মোনাখালী পাকসেনা ক্যাম্প যুদ্ধ (মুজিবনগর, মেহেরপুর)
মোনাখালী পাকসেনা ক্যাম্প যুদ্ধ (মুজিবনগর, মেহেরপুর) সংঘটিত হয় দুদিন – ৪ঠা ও ৯ই নভেম্বর। প্রথম দিনের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেন। দ্বিতীয় দিনের যুদ্ধে ২ জন পাকসেনা ও একজন রাজাকার নিহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের কিছু অস্ত্র ও রসদ হস্তগত করেন।
পাকিস্তানি বাহিনী ৩রা আগস্ট মানিকনগর থেকে উচ্ছেদ হয়ে মোনাখালী টহল চৌকিতে ক্যাম্প স্থাপন করে। এর পূর্বে পাকসেনারা ভৈরব নদের পূর্ব পাড়ে বাংকার খুঁড়ে নিয়মিত প্রহরায় ছিল। মোনাখালীতে ক্যাম্প স্থাপনের পর ৪ঠা আগস্ট তারা এ গ্রামের রাজাকার ছাদের মেম্বর (পিতা নস্কর) ও খেদের মণ্ডল (পিতা বিহারী মণ্ডল)-এর সহযোগিতায় গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের ভূপেন কুমার ভট্টাচার্যকে বাড়ি থেকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করে। ৫ই আগস্ট তারা আমানুল হককে হত্যা করে। এ-সময় তারা এলাকার নজরুল, নিয়ামত, জসিমউদ্দিন, আওলাদ, রসুল, রেজাউল, মহসিন মেম্বর, মহিবর, মেহরাজ, আদম, কেয়ামত, আবুল, গোলামসহ বহু মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে, গাছপালা কেটে সেই কাঠ, বাঁশ ও টিন ক্যাম্পের নির্মাণ কাজে ব্যবহার করে। হানাদার বাহিনীর এই অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা মোনাখালী ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। রেকি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খবরাখবর আ কা ম ইদ্রিস আলীর নেতৃত্বে গ্রামের লোকজন মুক্তিযোদ্ধাদের দিত। ৪ঠা নভেম্বর রাতে কমান্ডার বশির আহমেদ ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মোনাখালী পাকসেনা ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা করেন এবং ক্যাম্পের পাশে সন্তোষ মণ্ডলের বাড়িতে আশ্রয় নেন। রাজাকার ছাদের মেম্বর (মোনাখালী) পাকসেনা ক্যাম্পে খবর দিলে পাকসেনারা হঠাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করে। ফলে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন। ৯ই নভেম্বর কমান্ডার এ আর আযম চৌধুরীর নেতৃত্বে দারিয়াপুর গ্রামের সাত্তার, টিকারদ্দিন আত্তাব, ইনামুল, আইজদ্দিন, ইউসুফ, বিদ্যাধরপুর গ্রামের কাদের, রহমান, করিম, মোনাখালী গ্রামের রফিক, রহমান, জহির, আশরাফপুর গ্রামের তৌফিক, ছাত্তার, ছাদ আহম্মেদ, আলাউদ্দিনসহ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সহায়তায় একযোগে মোনাখালী ক্যাম্প আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধারা ভোর ৫টার পূর্বে মোনাখালী গ্রামটি ঘিরে রাখেন, যাতে পাকিস্তানী বাহিনীর সদস্যরা অন্যত্র পালিয়ে যেতে না পারে। সকাল ৭ টার সময় পাকবাহিনীর সদস্যরা টহল দিতে গ্রামের অন্যান্য স্থানে গমন করার পূর্বেই আক্রমণ শুরু হয়। নাটনা থেকে যৌথবাহিনী শেল নিক্ষেপ এবং মুক্তিযোদ্ধারা প্রবল গুলিবর্ষণ করলে পাকসেনারা দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে বাংকার ছেড়ে মাঠের মধ্যে পালিয়ে যায়। এতে ২ জন পাকসেনা ও একজন রাজাকার (আ. সামাদ, রশিকপুর) নিহত হয়। ২ দিন ধরে গোলাগুলি চলতে থাকে। এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা বাংকার থেকে হানাদার বাহিনীর খাবার, ৭-৮টি চাইনিজ হাতিয়ার ও ৩২টি ম্যাগাজিন হস্তগত করেন। এ আক্রমণে মোনাখালী এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে আসে। [মো. জামালউদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড