বীর প্রতীক মো. হামিদুল হক
মো. হামিদুল হক, বীর প্রতীক (১৯৫৩-২০১৮) কাদের সিদ্দিকীর বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৩ সালে টাঙ্গাইল জেলার সখীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ হাকিমুদ্দিন ও মাতার নাম বছিরুন্নেছা। হামিদুল হক রাজনীতি ও সমাজ সচেতন পরিবারিক আবহে বেড়ে ওঠেন। ৭১-এর ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ, মার্চ মাসে পূর্ব বাংলায় বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সর্বাত্মক
অসহযোগ আন্দোলন ইত্যাদি দ্বারা তিনি গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হন। এ-সময় তিনি রাজনৈতিক বিক্ষোভ-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২৫শে মার্চের গণহত্যা এবং
ধ্বংসযজ্ঞের পরপর তিনি প্রথমে প্রতিরোধ সংগ্রামে অংশ নেন। এরপর তিনি কাদের সিদ্দিকী, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে টাঙ্গাইল অঞ্চলে গড়ে ওঠা মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
তিনি টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন যুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় দেন। সেসব যুদ্ধের মধ্যে বল্লার যুদ্ধ (১২ই জুন) অন্যতম। এদিন পাকসেনাদের একটি দল কালিহাতী থেকে বল্লার বাজারের দিকে এগিয়ে আসছিল। এর পূর্বে ১২ই মে পাকসেনারা বল্লার বাজার জ্বালিয়ে দিয়েছিল এবং অনেককে হত্যা করেছিল। এবার কাদের সিদ্দিকী পাকহানাদারদের পুনরাক্রমণের প্রস্তুতির খবর পূর্বেই জানতে পেরে ১৩ জন যোদ্ধা নিয়ে বল্লা বাজারের পাশে নদীর তীরে অবস্থান নেন। পাকসেনারা স্বাভাবিক নিয়মে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে আসছিল। বল্লায় প্রবেশের পর নিস্তব্ধ জনশূন্য পরিবেশ দেখে তারা মনে করে মুক্তিযোদ্ধারা এ এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান থেকে ৮০-৯০ গজের মধ্যে আসতেই সবকজন মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র গর্জে ওঠে। সঙ্গে-সঙ্গে পাকসেনারাও ঝাঁকে-ঝাঁকে গুলি ছুড়তে থাকে। দেবপাড়া থেকে দুই কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধাদের অপর একটি দল ঘটনাস্থলের কাছাকাছি এসে পজিশন নেয়। দুদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে হানাদাররা বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে পড়ে। তাদের বেশকিছু সেনাসদস্য হতাহত হয়। পরাজয় স্বীকার করে তারা কালিহাতীর দিকে চলে যায়। এ যুদ্ধে হামিদুল হকের দল বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে। বল্লার যুদ্ধ ছাড়াও হামিদুল হক টাঙ্গাইল জেলার অন্যান্য স্থানে যুদ্ধ করেন এবং সাহসিকতার পরিচয় দেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মো. হামিদুল হক-কে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ৪ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম রমেছা বেগম। মো. হামিদুল হক ২০১৮ সালের ৫ই এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড