You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক মো. হেলালুজ্জামান

মো. হেলালুজ্জামান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৭) ১১ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিমান বাহিনীর নন-কমিশন অফিসার। তাঁর পৈতৃক বাড়ি নেত্রকোনা জেলার সদর থানার দেবশ্রী গ্রামে। তিনি ১৯৪৭ সালের ১লা নভেম্বর নানার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার রাউতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল গফুর এবং মাতার নাম হালিমা আক্তার খাতুন। তিনি রংপুর জেলার কেরামতিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৬৩ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
মো. হেলালুজ্জামান ১৯৬৬ সালের ৬ই জুন পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। বিমান বাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় তিনি করাচি থেকে এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করেন। বিমান বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর-এ তিনি ননকমিশন অফিসার (এনসিও) হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭০ সালে তাঁকে করাচি থেকে ঢাকায় বদলি করা হয়। তিনি ঢাকায় বিমান বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় দায়িত্ব পান। ১৯৭০ সালের নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন এবং বাঙালিদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানিদের যুদ্ধের প্রস্তুতি মো. হেলালুজ্জামানকে বিক্ষুব্ধ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সাতই মার্চের ভাষণ-এর পক্ষে প্রচারণা চালানোর অভিযোগে তাঁকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। এ অবস্থায় তিনি জীবন নাশের আশঙ্কায় পালিয়ে নারায়ণগঞ্জে যান। সেখানে তাঁর খালাতো ভাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন। কিছুদিন সেখানে থাকার পর তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে অবাঙালিরা ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে এ খবর পেয়ে তিনি আবার নারায়ণগঞ্জে যান। ২৫শে মার্চ পাকবাহিনী নারায়ণগঞ্জে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে মো. হেলালুজ্জামান স্থানীয় ছাত্র, যুবক ও জনতার সঙ্গে মিলে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। তাঁরা ট্রেনের বগি দিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করেন। ফলে এদিন পাকসেনারা নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে ব্যর্থ হয়। পরদিন ২৬শে মার্চ তারা নারায়ণগঞ্জে অনুপ্রবেশ করে। নারায়ণগঞ্জ পাকবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে হেলালুজ্জামান ঘোড়াশাল হয়ে নিজ জেলা নেত্রকোনায় চলে যান। সেখানে গিয়ে ছাত্র-যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুব্ধ ও সংগঠিত করেন। কিছুদিন পর তিনি শতাধিক ছাত্র-যুবক নিয়ে সিলেট বর্ডার দিয়ে ভারতে পৌছেন। সেখান থেকে তিনি তেলঢালায় ১১ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সে যান। এ সেক্টরের অধীনে তাঁকে কোম্পানি কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। তিনি ধানুয়া-কামালপুর মুক্তিযোদ্ধা ক্যম্পে দায়িত্ব পালন করেন। এখান থেকে তিনি বিভিন্ন যুদ্ধ ও এম্বুশে নেতৃত্ব দেন। একাধিকবার তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকসেনাদের আক্রমণ ও দলীয় যোদ্ধাদের রক্ষা করেন। মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর কামালপুর ক্যাম্প আক্রমণ করলে তিনি তাতে অংশ নেন। সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের এ যুদ্ধে যখন গুরুতর আহত হন, তখন তিনি তাঁর কাছাকাছি ছিলেন। আবু তাহের আহত হওয়ার পর ক্যাপ্টেন আজিজ ধানুয়া-কামালপুর ক্যাম্পের সঙ্গে যুক্ত হন। পাকবাহিনীর কামালপুর ক্যাম্পের পতন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মো. হেলালুজ্জামান সাহসিকতার সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মো. হেলালুজ্জামানকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি অফিসার পদে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে যোগ দেন। ২০০৪ সালে এ কোম্পানি থেকে ডিভিশনাল ম্যানেজার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ২ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম হামিদা আক্তার খাতুন। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!