মোগলবাসা গণহত্যা (কুড়িগ্রাম সদর)
মোগলবাসা গণহত্যা (কুড়িগ্রাম সদর) সংঘটিত হয় ৩রা ডিসেম্বর। এতে মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৮ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। চিলমারী যাওয়া-আসার পথে পাকিস্তান বাহিনী প্রায়শই রেল ও সড়ক পথে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কোম্পানির সদস্যদের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হতো। ফলে হাই কোম্পানির ওপর তাদের ভীষণ ক্ষোভ ছিল। হাই কোম্পানির সদস্যদের অবস্থান ছিল মূলত মোগলবাসা, বেলগাছার পূর্বাংশ, কৃষ্ণপুর, নয়ারহাট ও বুড়াবুড়ি এলাকায়। পাকিস্তানি বাহিনী তাদের ক্ষোভ মেটাতে ৩রা ডিসেম্বর মোগলবাসা আক্রমণ করে এবং গণহত্যা চালায়। মোগলবাসা গণহত্যায় পাকসেনাদের গাইড হিসেবে সহযোগিতা করে কৃষ্ণপুরের আব্দুর রহমান কন্ট্রাক্টর, আব্দুস সাত্তার, মোহাম্মদ আলী, মোজাম্মেল হক খন্দকার এবং নরেন্দ্র চন্দ্র। এসব দোসরদের সহযোগিতায় পাকবাহিনী মোগলবাসা হাটের সকল দোকানপাট, পার্শ্ববর্তী ব্যাপারীপাড়া, জাহের আমিনের বাড়ি, মালভাঙ্গা, কৃষ্ণপুর ও বকসীপাড়ার শতাধিক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং মুক্তিযোদ্ধাসহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। তারা হাই কোম্পানির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ডোমাস চন্দ্র (নীলফামারী) এবং মালভাঙ্গার কেতকির পারের আব্দুল করিমকে জিপ গাড়ির পেছনে দড়ি দিয়ে বেঁধে টানতে-টানতে কুড়িগ্রাম জেলখানায় নিয়ে আসে এবং সেখানেই তাঁদের হত্যা করে। মোগলবাসা গণহত্যায় কিশামত মালভাঙ্গার আ. জব্বার (পিতা নছর উদ্দিন), কেচুয়া মামুদ (পিতা কেছমত আলী), পঁচা মামুদ (পিতা ইউসুফ আলী), ডাক্তার এফাজ উদ্দিন (পিতা ডা. এছান উদ্দিন, সিতাইঝাড়), মিছির উদ্দিন (পিতা রহিমুদ্দিন), গুলাদ্দি ও বাঙ্গু মামুদ (পিতা নিজামুদ্দিন), বদিয়তুল্লাহ (পিতা বুদ্দি মামুদ), আব্দুল হক (পিতা ইসমাইল), মহব্বত আলী (পিতা মতিজোলা), একাব্বর আলী (পিতা হেকরা মামুদ), ফজল উদ্দিন (পিতা ফারাজ উদ্দিন), মনির উদ্দিন, শওকত আলী (পিতা হেলপেষুন) সহ ১৮ জন শহীদ হন। স্থানীয় জনগণ শহীদদের মোগলবাসায় ধরলা নদীর পাড়ে কবর দেয়। ধরলার করাল গ্রাসে কবরস্থানটি বিলীন হয়ে যায়। [এস এম আব্রাহাম লিংকন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড