বীর প্রতীক মো. শহিদুল্লাহ
মো. শহিদুল্লাহ, বীর প্রতীক (১৯৫৩-১৯৭১) স্কুলের ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৩ সালে ঢাকার হাজারীবাগ থানার মনেশ্বর রোডে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. সফি উল্লাহ এবং মাতার নাম আঙ্গুরা বেগম। মো. শহিদুল্লাহ ১৯৭১ সালে ঢাকার আজিমপুরের ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুলে নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
১৯৭১ সালে সারা দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর আহবানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে এর বিভিন্ন কর্মসূচি ওয়েস্ট এন্ড স্কুলেও পালিত হয়। এখানকার ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত হয়। তরুণ মো. শহিদুল্লাহ পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত মে মাসে আরো কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে পালিয়ে তিনি ভারতে যান। আগরতলায় গিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে একাধিক যুদ্ধে অংশ নেন। পরে ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম অন্যদের সঙ্গে মো. শহিদুল্লাহকে এ সেক্টরের স্টুডেন্ট প্লাটুনের অন্তর্ভুক্ত করেন। এ সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মো. শহিদুল্লাহ নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
ঢাকায় পাকিস্তানিদের পতন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৭ই ডিসেম্বর মো. শহিদুল্লাহ কেরানীগঞ্জ থেকে আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাসহ ঢাকায় ফেরার সময় ধলেশ্বরী নদীর খোলামুড়া ঘাটের অদূরে নৌকাডুবিতে মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা শহরে বেড়ে ওঠা এ অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা সাঁতার না জানার কারণে নদী পার হতে পারেননি। তাঁর সঙ্গে এদিন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন, বীর প্রতীকএরও সলিল সমাধি ঘটে। পরে মো. শহিদুল্লাহকে আজিমপুর নতুন কবর স্থানে দাফন করা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধুর সরকার মো. শহিদুল্লাহকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড