বীর উত্তম মো. শামসুজ্জামান
মো. শামসুজ্জামান, বীর উত্তম (১৯৫০-১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫০ সালে কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলার সোনারচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. দৌলত হোসেন এবং মাতার নাম আয়াতুন নেসা। তিনি ১৯৬৬ সালে সিলেট এন জি এফ এফ সরকারি হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৮ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে শামসুজ্জামান মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে এমএ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিলেন।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত রাজপথের প্রতিটি আন্দোলনে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গণহত্যা আর নির্যাতন শুরু করলে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ৭ই এপ্রিল তিনি ভারতে যান এবং আসামের গৌহাটি প্রশিক্ষণ শিবির থেকে সম্মুখ যুদ্ধের ওপর ২৮ দিনের সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। জুলাই মাসে নিয়মিত বাহিনী নিয়ে ‘জেড’ ফোর্স ব্রিগেড গঠন করা হলে, তাঁকে ‘জেড’ ফোর্সের ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ রেজিমেন্টের সঙ্গে শামসুজ্জামান কামালপুর ও নকশী বিওপি- সহ ১১নং সেক্টরে বিভিন্ন যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। সেসব যুদ্ধের মধ্যে ৪ঠা আগস্ট সংঘটিত জামালপুর/শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার অন্তর্গত নকশী বিওপি যুদ্ধ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। নকশী বিওপি ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি শক্ত ঘাঁটি। ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোম্পানি কমান্ডার ক্যাপ্টেন – আমিন আহমেদ চৌধুরী, বীর বিক্রমএর নেতৃত্বে ৪ঠা আগস্ট ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা নকশী বিওপি আক্রমণ করেন। পাকিস্তানি বাহিনীও পাল্টা আক্রমণ করে। উভয় পক্ষের আর্টিলারি গোলার শব্দে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে শত্রুসেনাদের নিক্ষিপ্ত একটি আর্টিলারি গোলার আঘাতে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ঘটনার আকস্মিকতায় মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লেও শামসুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাহসিকতা ও বীরত্বের ফলে শত্রুসেনারা বেশ চাপের মুখে পড়ে। শামসুজ্জামান বিওপির প্রায় ৫০ গজের মধ্যে পৌঁছলে শত্রুদের পুঁতে রাখা ভূমি মাইনের আঘাতে তিনি শহীদ হন। সহযোদ্ধারা তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করতে পারেননি।
স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার শহীদ মো. শামসুজ্জামানকে ‘বীর উত্তম’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৪, খেতাবের সনদ নং ৪১)। এছাড়াও তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য চট্টগ্রাম সেনানিবাসের একটি প্যারেড গ্রাউন্ডের নামকরণ করা হয় শহীদ শামসুজ্জামান প্যারেড গ্রাউন্ড। [সাজাহান মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড