বীর প্রতীক মো. শহিদুল্লাহ
মো. শহিদুল্লাহ, বীর প্রতীক (১৯৩৪-২০০৮) বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিমান বাহিনীর সৈনিক। তিনি ১৯৩৪ সালের ৩০শে অক্টোবর নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার বাদলকোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম জামিলা খাতুন এবং পিতার নাম ফজলুল হক মুন্সি। মাধ্যমিক পর্যায়ে অধ্যয়নের পর মো. শহিদুল্লাহ কর্মজীবন শুরু করেন।
মো. শহিদুল্লাহ পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে চাকরি নেন। বিমান বাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় তিনি বাঙালিদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানিদের বৈষম্যমূলক আচরণ প্রত্যক্ষ করেন। ৭১-এর মার্চে তিনি ঢাকা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। এ-সময় তিনি একজন বাঙালি ওয়ারেন অফিসারকে পাকিস্তানিদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হতে দেখেন। এ ঘটনা তাঁকে সাংঘাতিকভাবে বিক্ষুব্ধ করে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। এক সময় তিনি ঢাকা থেকে নিজ এলাকা চাটখিলে যান। সেখানে স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এপ্রিল মাসে তিনি অন্যদের সঙ্গে ভারতে যান। মুক্তিবাহিনীর বিমান উইং গঠিত হলে তিনি তাতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিমান আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। ৩রা ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী নারায়ণগঞ্জের গোদানাইল তেল ডিপোতে বিমান আক্রমণ পরিচালনা করে। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে পাকসেনারা গোদানাইলে তেলের বড় মজুত গড়ে তোলে। এখান থেকে তারা ঢাকাসহ সারা দেশে জ্বালানি তেল সরবরাহ করত। ৩রা ডিসেম্বর এ তেল ডিপোতে বিমান আক্রমণে মো. শহিদুল্লাহ অংশ নেন। তাঁর সাহসিকতার কারণে এ আক্রমণ সফল হয়। ডিপোর ট্যাঙ্কারগুলো শহিদুল্লাহর নিক্ষিপ্ত গোলায় বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মো. শহিদুল্লাহকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭৭ সালে সার্জেন্ট হিসেবে বিমান বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ৩ কন্যা ও ৪ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম আমেনা বেগম। শহিদুল্লাহ ২০০৮ সালের ১২ই জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড