You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর উত্তম মো. শাহ আলম

মো. শাহ আলম, বীর উত্তম (শহীদ ১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর বাড়ি ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার দেদার উল্লাহ গ্রামে। তাঁর পিতার নাম আরফান আলী ফরাজী এবং মাতার নাম সাহেদা খাতুন। তিনি এক কন্যা ও চার পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মোসাম্মৎ ফাতেমা খাতুন।
১৯৭১ সালে শাহ আলম পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ৫ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের শিয়ালকোট সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হবার পূর্বেই তিনি দুই মাসের ছুটি কাটাতে নিজ গ্রামে আসেন। ছুটিতে থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সৈন্যদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা জানতে পেরে তিনি চাকরিস্থলে ফিরে না গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। দৌলতখান উপজেলার রাধাবল্লভ বাজার হাইস্কুল মাঠে স্থানীয় ছাত্র, যুবক ও সাধারণ জনতাকে সংঘবদ্ধ করে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি সশস্ত্র প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলেন। স্থানীয়ভাবে গড়ে তোলা তাঁর দল নিয়ে তিনি ভোলা, খেয়াঘাট, ইলিশা, জংশনঘাট, চকিঘাট, দৌলতখান, হাতিয়া বাজার ও ফেনীর ছাগলনাইয়ায় পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে তিনি ভারতের আগরতলা যান। তাঁকে ১নং বেঙ্গল রেজিমেন্টের অন্তর্ভুক্ত করে ১নং সেক্টরে নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে নিয়মিত বাহিনী নিয়ে ব্রিগেড ফোর্স গঠন করা হলে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে শাহ আলমকে ‘জেড’ ফোর্সের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ব্যাটালিয়ন কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ, বীর উত্তম এর নেতৃত্বে তিনি বৃহত্তর সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এসব যুদ্ধের মধ্যে সিলেট জেলার কানাইঘাট যুদ্ধ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।
ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে শাহ আলমের নেতৃত্বে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা সিলেটের কানাইঘাটে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ করেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল শত্রুসৈন্যদের হটিয়ে সুরমা নদীর ওপর নির্মিত সেতু দখল করা। দুপক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে শত্রুসৈন্যদের ছোড়া গুলি এসে তাঁর মাথায় লাগলে তিনি ঘটনাস্থলে শহীদ হন। সহযোদ্ধারা তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে কানাইঘাটে সমাহিত করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গ ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার শহীদ হাবিলদার মো. শাহ আলমকে ‘বীর উত্তম’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৪১, খেতাবের সনদ নং ৩৪)। তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য তাঁর নামে বগুড়া সেনানিবাসের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!