বীর প্রতীক মো. রত্তন আলী শরীফ
মো. রত্তন আলী শরীফ, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৮) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বিমান বাহিনীর সৈনিক। তিনি ১৯৪৮ সালের ২রা জানুয়ারি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রাকুদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম নূর মোহাম্মদ শরীফ এবং মাতার নাম কদবানু বিবি। তিনি ১৯৬৩ সালে চাখার ফজলুল হক ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৭২ সালে আবুল কালাম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন।
মো. রত্তন আলী শরীফ ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ এর পর বিমান বাহিনীর কর্পোরাল পদে চাকরিরত অবস্থায় ছুটি নিয়ে তিনি ১৮ই মার্চ দেশে আসেন এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাতে যোগদান করেন। ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষিত হওয়ার পর মেজর এম এ জলিলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সশস্ত্র অবস্থায় তিনি বরিশাল বিমান বন্দরে অবস্থান নেন। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে তিনি পাকবাহিনীর অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে স্থানীয়দের সহযোগিতায় দোয়ারিকা ও শিকারপুর ঘাটের ফেরিদুটি ডুবিয়ে দেন। এ বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য তিনি দ্রুত পরিচিতি লাভ করেন। বরিশালে পাকবাহিনীর অনুপ্রবেশের পর দুটি রাইফেল নিয়ে তিনি এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন। জুলাই মাসের প্রথমদিকে কমান্ডার আবুল কাশেম, আব্দুল মজিদ খান প্রমুখের সহায়তায় রত্তন আলী দোয়ারিকা ঘাটের পশ্চিম পাড়ের রাজাকার ঘাঁটি দখল করেন এবং সেখান থেকে বহু অস্ত্র হস্তগত করেন। এ মাসেরই মাঝামাঝি সময়ে তিনি রাকুদিয়ার কুমারবাড়ি অপারেশনে নেতৃত্ব দেন। এ অপারেশনে ১১ জন রাজাকার নিহত হয়। ২৭শে জুলাই তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দোয়ারিকা ঘাটের পূর্বপাড়ের রাজাকার ঘাঁটি দখল করেন। আগস্টের শেষদিকে সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মো. শাহজাহান ওমর, বীর উত্তম-এর কাছ থেকে তিনি বাবুগঞ্জের কমান্ডারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৩রা ডিসেম্বর তিনি দোয়ারিকা ফেরিঘাটে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এ যুদ্ধে দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং তিনি নিজে আহত হন। এছাড়া বাবুগঞ্জ ও উজিরপুরের বেশ কয়েকটি যুদ্ধ ও অপারেশনে তিনি সাহসী ভূমিকা রাখেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য মো. রত্তন আলী শরীফকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭২ সালে তিনি পুনরায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৮৪ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম জাহানারা বেগম। ৪ কন্যা ও ৫ পুত্র সন্তানের জনক মো. রত্তন আলী শরীফ, বীর প্রতীক বর্তমানে নিজ গ্রামে বসবাস করছেন। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড