You dont have javascript enabled! Please enable it!

কিশোর মুক্তিযোদ্ধাবীর প্রতীক মো. রফিকুল ইসলাম

মো. রফিকুল ইসলাম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫১) স্কুলের ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী বীর কিশোর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার কাংশী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুর রশিদ খান, মাতার নাম মোসা. রাজিয়া বেগম। ৫ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। ১৯৭১ সালে তিনি স্থানীয় ধামুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তখনই তিনি ছাত্র-রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনসহ পরবর্তী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এজন্য মাধ্যমিক পর্যায়ে তাঁর লেখাপড়ায় ২ বছর ব্যাঘাত ঘটে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-এর একজন কর্মী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি ভূমিকা রাখেন। ৭১- এর মার্চ মাসে তিনি ঢাকার মিরপুরে অবস্থান করছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ-এ অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর নৃশংস গণহত্যা শুরু করলে তিনি গ্রামের বাড়ি চলে আসেন। মায়ের অনুপ্রেরণায় ছোট ভাই শফিকুল ইসলামসহ তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
মো. রফিকুল ইসলাম স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণের পর ১০ই এপ্রিল ভারতে চলে যান। ভারতের চাকুলিয়া, বীরভূম, বিহার প্রভৃতি স্থানে এক মাস এবং ২৪ পরগণার রানাঘাটে ৩ মাস মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ৯ নম্বর সেক্টরে এম এ জলিলের অধীন সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমরের বাহিনীতে যোগ দেন এবং বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৫ই আগস্ট ভারতের টাকি থেকে রওনা হয়ে একই মাসের শেষদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের ৬৪ জনের এ দলটি উজিরপুরের হাবিবপুর আসে এবং হানাদার বাহিনীকে মোকাবেলার জন্য অবস্থান নেয়। ২২শে আগস্ট হানাদার বাহিনী ৩টি গানবোট নিয়ে হাবিবপুর এলাকায় অপারেশন করতে এলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় তাঁরা তাদের ওপর আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের যুদ্ধে বহু সংখ্যক পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকার হতাহত হয়। এ যুদ্ধে মো. রফিকুল ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এরপর তাঁরা সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমরের নেতৃত্বে উজিরপুর উপজেলার বড়াকোঠায় ক্যাম্প স্থাপন করেন। এ ক্যাম্পে অবস্থান করে বাবুগঞ্জ থানা অপারেশন (৩রা অক্টোবর)-সহ তাঁরা অনেকগুলো যুদ্ধ ও অপারেশন পরিচালনা করেন। হানাদার বাহিনী বড়াকোঠায় গণহত্যা (১৭ই সেপ্টেম্বর) সংঘটিত করলে তাঁরা স্বরূপকাঠির বিন্নায় অবস্থান নেন। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধাদের এ দলটি কেউন্দিয়া যুদ্ধ (২২শে সেপ্টেম্বর), গাবখান যুদ্ধ, রাজাপুর থানা আক্রমণ, বাকেরগঞ্জ থানা যুদ্ধ (৫ থেকে ৭ই ডিসেম্বর)-এ অংশ নেয়। প্রতিটি যুদ্ধে মো. রফিকুল ইসলাম সাহসী ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে কেউন্দিয়া যুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মো. রফিকুল ইসলামকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন। এরপর তিনি ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোনিবেশ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম শিউলী বেগম। এ দম্পতির ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তান রয়েছে। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!