You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক মো. রবিউল্লাহ

মো. রবিউল্লাহ, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪০) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪০ সালে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বড় ধুশিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জাফর আলী, মাতার নাম আমেনা বেগম। মো. রবিউল্লাহ পাকিস্তান সেনাবাহিনবীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে তিনি যশোর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে সেনানিবাসের বাঙালি সৈনিকরা তাদের আক্রমণের শিকার হন।
মো. রবিউল্লাহসহ বাঙালি সৈনিকরা কোত ভেঙ্গে অস্ত্র নিয়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে লিপ্ত হন। সারাদিন যুদ্ধের পর কৌশলে সেনানিবাস থেকে পালিয়ে তাঁরা যশোরের চৌগাছায় সমবেত হন। অতঃপর মো. রবিউল্লাহ অন্যদের সঙ্গে ভারতের বনগাঁও যান। সেখানে থেকে মেজর হাফিজের নেতৃত্বে বিভিন্ন যুদ্ধে সাহসিকতার পরিচয় দেন।
জুন মাসে মো. রবিউল্লাহ তেলঢালায় ‘জেড’ ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জামালপুর এলাকার বিভিন্ন অপারেশন এবং সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সেগুলোর মধ্যে ৩১শে জুলাই কামালপুরের যুদ্ধ অন্যতম। কামালপুরে পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হয়। কামালপুর জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে পাকিস্তানি বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি ছিল। মো. রবিউল্লাহ ছিলেন প্রথম ইস্ট বেঙ্গলের ব্রাভো কোম্পানিতে। তাঁর অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বীর বিক্রম (পরে মেজর)। মো. রবিউল্লাহ অধিনায়কের কাছাকাছিই ছিলেন। একদিন যুদ্ধে পাকিস্তানিদের গুলিতে অধিনায়ক আহত হলে তাঁর হাতে থাকা স্টেনগান ও ওয়ারলেস দূরে ছিটকে পড়ে। অধিনায়ক রবিউল্লাহকে স্টেনগান ও ওয়ারলেস উদ্ধার করে পশ্চাদপসরণ করতে নির্দেশ দেন। যুদ্ধে উভয় পক্ষে অনেকে নিহত হয়। গুলি-বৃষ্টির মধ্যেই অধিনায়কের স্টেনগান, ওয়ারলেস ও শহীদ এক সহযোদ্ধার লাশ নিয়ে ক্রলিং করে পেছনে যাচ্ছেন রবিউল্লাহ। হঠাৎ তাঁর আহত অধিনায়ককে উদ্ধার করতে গ্রেনেডহাতে তিনি দৌড়ে তাঁর কাছে যেতেই শত্রুর ছোড়া গুলিতে নিজে গুলিবিদ্ধ হন। বুকে গুলি লেগে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। মুখ থুবড়ে পড়ে যান রবিউল্লাহ। পরক্ষণেই আরেকটি গুলি লাগে তাঁর তলপেটে। তাঁর বুক ও তলপেট থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। বহু চেষ্টা করে তিনি একটি ক্ষেতের মধ্যে পড়ে যান। ৩ জন পাকিস্তানি সৈন্য তাঁর দিকে আসতে দেখে ঐ অবস্থায়ও তিনি গ্রেনেড হাতে লড়াই করার সংকল্প করেন। কিন্তু পাকিস্তানি সৈন্যরা তাঁকে মৃত ভেবে দূর থেকেই চলে যায়। এরপর তিনি উঠে দৌড়াতে চেষ্টা করে জ্ঞান হারান। পরে সহযোদ্ধারা তাঁকে উদ্ধার করে ভারতের গৌহাটি হাসপাতালে পাঠান। সেখানে তাঁর চিকিৎসা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা প্রদর্শন ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মো. রবিউল্লাহকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁর স্ত্রীর নাম রাজিয়া বেগম। এ দম্পতির ৩ কন্যা ও ৬ পুত্র সন্তান রয়েছে। [রেহানা পারভীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!