বীর প্রতীক মো. রুস্তম আলী
মো. রুস্তম আলী, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫২) বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিমান বাহিনীর সৈনিক। তিনি ১৯৫২ সালে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোখলেছুর রহমান এবং মাতার নাম ছৈয়দা খাতুন। মো. রুস্তম আলী স্থানীয় স্কুলে অধ্যয়ন করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতি-সচেতন ও অত্যন্ত সাহসী ছিলেন।
মো. রুস্তম আলীর কর্মজীবন শুরু হয় পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদানের মধ্য দিয়ে। তিনি ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন। মার্চ মাসে ছুটিতে তিনি দেশের বাড়ি সীতাকুণ্ডের ঘোড়ামারায় আসেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ডাকে তখন দেশে অসহযোগ আন্দোলন চলছিল। ঢাকায় ২৫শে মার্চ গণহত্যা শুরু হলে মো. রুস্তম আলী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ২৬শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি নিজ এলাকায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। ২৬শে মার্চ কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে এক দল পাকসেনা তাঁর এলাকার কুমিরায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। বাঙালি ইপিআর, পুলিশ, বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক ও ছাত্র-জনতা তাদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বিমান বাহিনীর একজন সৈনিক হিসেবে মো. রুস্তম আলী তাঁর সামরিক অভিজ্ঞতা নিয়ে এ প্রতিরোধযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এতে উভয় পক্ষে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। তবে শেষ পর্যন্ত পাকবাহিনীর শক্তিশালী আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ে। এরপর তিনি ভারতে যান। সেখানকার নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণের পর দেশে এসে বিভিন্ন যুদ্ধ ক্ষেত্রে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। তিনি একাধিক মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্ব দেন। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় তিনি যুদ্ধ করেন। একজন লড়াকু যোদ্ধা হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মো. রুস্তম আলীকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ২ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম পেয়েরা আক্তার। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড