You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক মো. রেজাউল হক

মো. রেজাউল হক, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৬) অনারারি ক্যাপ্টেন ও মুক্তিযুদ্ধের একজন সাহসী সৈনিক। ১৯৪৬ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্নি গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা ছহির উদ্দিন এবং মাতা খাতনারা বেগম।
মো. রেজাউল হক ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ছিলেন তৃতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক। চট্টগ্রাম ইবিআরসি থেকে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেন। এরপর যশোর ক্যান্টনমেন্টে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে তৃতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্ট সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান করছিল। রেজাউল হক রেজিমেন্টের একটি অংশের সঙ্গে ঘোড়াঘাটে শীতকালীন মহড়ায় নিয়োজিত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে বাঙালি সৈনকিদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করলে তিনি নিজ ইউনিটের সঙ্গে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
সুবেদার আফতাব আলীর নেতৃত্বে রেজাউল হক পলাশবাড়ীতে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালিয়ে বেশকিছু পাকসেনাকে হত্যা করেন। এরপর বদরপুর ও গাইবান্ধায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। রৌমারী মুক্ত করে সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করেন এবং ছাত্র-যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ৪টি প্লাটুন গঠন করেন। এ-সময় তাঁর ওপর একটি কোম্পানির ২টি প্লাটুনের কমান্ডারের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। তিনি কোদালকাঠিতে তাঁর প্রতিরক্ষা অবস্থান গড়ে তোলেন এবং চিলমারী, গাইবান্ধা, উলিপুর প্রভৃতি স্থানে পাকবাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেন। ১৪ই আগস্ট রেজাউল হক চরনেওয়াজাতে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে একনাগাড়ে সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধ করে তাদের পিছু হটতে বাধ্য করেন। এখানে ৭ জন শত্রুসেনা নিহত এবং তাদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
১৭ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী বিমান, নৌ ও স্থল সাপোর্টসহ এক বিরাট বহর নিয়ে ভোরের দিকে চরসাজাইয়ে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের ওপর তিনদিক দিয়ে তীব্র আক্রমণ পরিচালনা করলে বাহিনীকে দ্রুত সংঘবদ্ধ করে পাল্টা আক্রমণে যান রেজাউল হক। এতে পাকবাহিনীর শতাধিক সৈন্য নিহত হয়। এ যুদ্ধে মো. রেজাউল হক অসামান্য বীরত্বের পরিচয় দেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মো. রেজাউল হককে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর তিনি অনারারি ক্যাপ্টেন পদমর্যাদায় উন্নীত হন। তিনি ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মমতাজ বেগম। [হারুন রশীদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!