You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক মো. নোয়াব মিয়া

মো. নোয়াব মিয়া, বীর প্রতীক (১৯৫৪-১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্টুডেন্ট প্লাটুনের সাহসী সৈনিক। তিনি ১৯৫৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের ছোট কুড়ি পাইকা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এ গ্রাম বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের খুব কাছাকাছি অবস্থিত। তাঁর পিতার নাম মন্তাজ উদ্দিন মিয়া এবং মাতার নাম আজিবন নেছা। নোয়াব মিয়া ছোট কুড়ি পাইকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। বেশি লেখাপড়া না করায় অল্প বয়সে ব্যবসার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭১ সালে তিনি আখাউড়া শহরে ছোট একটি স্টেশনারি দোকান চালাতেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশে হত্যাযজ্ঞ ও আখাউড়াসহ সর্বত্র তাদের দখল প্রতিষ্ঠা করলে তিনি ব্যবসা ফেলে দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ায় পাকবাহিনী ও রাজাকাররা পরে নোয়াব মিয়ার স্টেশনারি দোকান পুড়িয়ে দেয়। এ তরুণ মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধক্ষেত্রে চরম সাহসিকতা প্রদর্শন করেন।
নোয়াব মিয়া এপ্রিল মাসে ভারতের আগরতলায় গিয়ে ২ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। বয়স কম থাকায় (১৬ বছর) তাঁকে স্টুডেন্ট. প্লাটুনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মেলাঘরে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণের পর স্টুডেন্ট প্লাটুনের অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তাঁকে আগরতলার নরসিংহগড়ে পাঠানো হয়। এখান থেকে তাঁকে এক দল মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে ১লা আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কলাছড়া চা-বাগানস্থ পাকিস্তানি হানাদারদের ক্যাম্পে আক্রমণের জন্য পাঠানো হয়। ২রা আগস্ট রাতে তাঁরা এ ক্যাম্পে আক্রমণ করেন। পাকসেনারা পাল্টা আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ হয়। তরুণ নোয়াব মিয়া নিজের এলএমজি নিয়ে সামনে অগ্রসর হয়ে শত্রুদের ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। তাঁর গুলিতে পাকিস্তানি সৈন্যদের বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। নোয়াব মিয়া বীরদর্পে গুলি চালিয়ে পাকসেনাদের কাছাকাছি চলে গেলে হঠাৎ বুকে গুলিবিদ্ধ হন। কিন্তু সহযোদ্ধাদের মনোবল অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য তিনি তাঁর আহত হওয়ার খবর অন্যদের জানতে দেননি। ভোরে গুলিবিদ্ধ নোয়াব মিয়াকে দেখে অন্য মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে আগরতলা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে রক্তক্ষরণ হওয়ায় হাসপাতালে যাওয়ার পথে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁর মরদেহ সীমান্তের ভারতীয় অংশে আনোয়ারপুর গ্রামে সমাহিত করা হয়। তাঁর কবর সেখানে রয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গ ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধুর সরকার মো. নোয়াব মিয়াকে ‘বীর প্রতীক’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করে। স্থানীয়ভাবে নোয়াব মিয়ার স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ছোট কুড়ি পাইকা গ্রামের পার্শ্ববর্তী হিরাপুরে স্থাপিত একটি হাইস্কুলের নাম দেয়া হয়েছে ‘হিরাপুর শহীদ নোয়াব মেমোরিয়াল হাইস্কুল’। বিজয়পুর থেকে ছোট কুড়ি পাইকা গ্রাম পর্যন্ত রাস্তার নাম দেয়া হয়েছে ‘শহীদ নোয়াব সড়ক’। ছোট কুড়ি পাইকা গ্রামের শহীদ নোয়াবের বাড়ির প্রবেশ পথে ‘বীর প্রতীক শহীদ নোয়াব’ নামে একটি গেইট স্থাপিত হয়েছে। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!