বীর প্রতীক মো. বদিউজ্জামান টুনু
মো. বদিউজ্জামান টুনু, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯২৯) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯২৯ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর রাজশাহী মহানগরের লক্ষ্মীপুর ঝাউতলার মোড়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল গফুর এবং মাতার নাম তাইসুন নেছা। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁর বড় ভাইয়ের দুই ছেলে, ছোট ভাই, ভগ্নিপতি ও ভাগনি জামাই নাজমুল হক সরকার এমএনএ- কে হত্যা করে।
বদিউজ্জামান টুনু ১৯৭১ সালে একটি ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৪২ বছর। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরেই তাঁর পরিবারের ওপর পকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হামলা ও প্রাণনাশের ঘটনা ঘটলে তিনি ভারতে চলে যান। ভারতের আলীপুর স্কুল ক্যাম্পে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি কর্নেল নুরুজ্জামান ও মেজর মো. নাজমুল হকের অধীনে ৭নং সেক্টরের লালগোলা সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এ সাব- সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর গিয়াসউদ্দিন আহমেদ। বদিউজ্জামান টুনু অনেকগুলো গেরিলা যুদ্ধের পাশাপাশি সম্মুখ যুদ্ধও করেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল রাজশাহীর গোদাগাড়ীর অভয়া সেতু অপারেশন।
সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে ৭ নম্বর সেক্টরের লালগোলা সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর রাজশাহী- চাঁপাইনবাবগঞ্জের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গোদাগাড়ীর অভয়া সেতু ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন। অপারেশনের আগে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে সেতুটি রেকি করতে পাঠানো হয়। তিনি ফিরে এসে সেতু সম্পর্কে বর্ণনা দেন। অপারেশনের দিন মুক্তিযোদ্ধাদের পদপ্রদর্শনের জন্য এ ব্যক্তির আসার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও ঐ ব্যক্তি না আসায় মুক্তিযোদ্ধারা লক্ষ্যস্থলের দিকে রওনা হন। নদীপথে নৌকাযোগে লক্ষ্যস্থলের কাছাকাছি পৌঁছাতেই পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা হকচকিত হয়ে পড়েন। তাঁরা নৌকা থেকে ঝাঁপিয়ে পানিতে পড়েন। অস্ত্রসহ নৌকা ভেসে যাচ্ছে দেখে বদিউজ্জামান ঝুঁকি নিয়ে নৌকা টেনে আনেন। রাতের অন্ধকারে চারদিকে পানির মধ্যে পজিশন নেয়ার মতো একটি উঁচু জায়গা পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর সড়ক পথে পাকিস্তানি সৈন্যদের আরো গাড়ি আসতে দেখে মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত ঐ স্থান ত্যাগ করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। স্থানীয় লোকটির বিশ্বাসঘাতকতায় মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন সেতু ধ্বংস করতে পারেননি। তবে যুদ্ধে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয় এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়া ইসলামপুর পোড়াগ্রামে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণে বদিউজ্জামান টুনু বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য বদিউজ্জামান টুনুকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁর স্ত্রীর নাম ফিরোজা জামান (সাবেক এমপি)। এ দম্পতি ২ পুত্র ও ৩ কন্যার জনক-জননী [রেহানা পারভীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড