You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর উত্তম মো. মঈনুল হোসেন

মো. মঈনুল হোসেন, বীর উত্তম (১৯৪৪-১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৪ সালে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার কুসুমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কালা মিয়া এবং মাতার নাম সুফিয়া খাতুন। তিনি এক পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম সালেহা বেগম। ছোটনা হাই স্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে মঈনুল হোসেনের কর্মস্থল ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ব্যাপক গণহত্যা শুরু করলে বাঙালি সৈনিক, ইপিআর, পুলিশ বাহিনী এবং ছাত্র-জনতা বিদ্রোহ করে প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করলে মঈনুল হোসেনও তাতে অংশ নেন। তাঁর ইউনিটের বাঙালি কমান্ডিং অফিসারের নেতৃত্বে তিনি বৃহত্তর কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং ঢাকা জেলার বিভিন্ন স্থানে সাফল্যের সঙ্গে একের পর এক যুদ্ধ চালিয়ে যান। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে গিয়ে পুনরায় সংগঠিত হবার পর তিনি ২নং সেক্টরের সন্দভাগ সাব-সেক্টরের অধীনে সালদা নদী, বুড়িচং ও কসবা এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধ করে শত্রুদের বিপুল ক্ষতিসাধন করেন।
২০শে সেপ্টেম্বর মঈনুল হোসেন তাঁর কমান্ডিং অফিসার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আব্দুল গাফফার হালদার, বীর উত্তম-এর পরিকল্পনা ও নির্দেশমতো ৮ জন সহযোদ্ধাসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার সাহেব বাড়িতে অবস্থিত পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা ক্যাম্প আক্রমণের জন্য অগ্রসর হন। শত্রুবাহিনী গোয়েন্দাসূত্রে পূর্বেই এ খবর জানতে পেরে কাইয়ুমপুর নামক স্থানে এম্বুশ করে তাঁদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। পাল্টা আক্রমণ করার পূর্বেই মঈনুল হোসেন তাঁর দুজন সহযোদ্ধাসহ পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। খবর পেয়ে ক্যাপ্টেন গাফফারের নির্দেশে সুবেদার আম্বিয়া তাঁদের উদ্ধারের জন্য শত্রুসৈন্যদের ধাওয়া করলে পাকিস্তান বাহিনী তিনজনকেই হত্যা করে পালিয়ে যায়। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শহীদ মঈনুল হোসেনের মৃতদেহ উদ্ধার করে সহযোদ্ধারা কসবার সালদা নদীর পাড়ে সামরিক রীতিতে সম্মান জানিয়ে সমাহিত করেন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগ ও বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার শহীদ নায়েক সুবেদার মো. মঈনুল হোসেনকে ‘বীর উত্তম’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৩৯, খেতাবের সনদ নং ৩১)। তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য ঢাকা সেনানিবাসের একটি সড়কের নামকরণ করা হয় “শহীদ মঈনুল হোসেন সড়ক’। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!