You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক মো. মাহাবুব এলাহী রঞ্জু

মো. মাহাবুব এলাহী রঞ্জু, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫৩) ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণবাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার। তিনি ১৯৫৩ সালে গাইবান্ধা জেলার পৌর এলাকার মুন্সিপাড়ায় জন্মগ্রহণকরেন। তাঁর পিতার নাম ফজলে এলাহী, মাতার নাম মেহেরুন্নেসা। মাহাবুব এলাহী
রঞ্জু ১৯৭১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ এ তিনি অনুপ্রাণিত হন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫শে মার্চ বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করলে রাজনীতি-সচেতন মাহাবুব এলাহী রঞ্জু প্রতিরোধযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। পরবর্তীতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে ভারতে চলে যান। ভারতের মেলাঘরে তুরা পাহাড়ের পাদদেশে উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে ১১ নম্বর সেক্টরে কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এ সেক্টরের মানকারচর সাব-সেক্টর এলাকায় অনেকগুলো অপারেশন এবং সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মাহাবুব এলাহী ছিলেন গণবাহিনীর একটি কোম্পানির অধিনায়ক। তাঁর নামেই কোম্পানিটির নামকরণ করা হয়। রঞ্জু কোম্পানি গাইবান্ধা জেলার উড়িয়াঘাট, রতনপুর, দাড়িয়াপুর, ছাপড়াহাটি, বাদিয়াখালী, কাইয়ারহাট, কেতকীর হাটসহ কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী এলাকার বিভিন্ন স্থানে এম্বুশ, সেতু ধ্বংস, প্রত্যক্ষ যুদ্ধসহ নানা ধরনের অপারেশন করে। ৩রা নভেম্বর মাহাবুব এলাহীর নেতৃত্বে গাইবান্ধা জেলার বালাসীঘাটে একটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন পরিচালিত হয়। গাইবান্ধা জেলা সদর থেকে পূর্বদিকে ১০-১১ কিলোমিটার দূরে বালাসীঘাট। পাকিস্তানি সৈন্যরা নিয়মিত এ ঘাটে টহল দিত। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এ পথ ব্যবহার করে গাইবান্ধায় অপারেশন পরিচালনা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। মাহাবুব এলাহীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ৩রা নভেম্বর ভোরের আলো ফোটার আগেই গোপন আস্তানা থেকে বালাসীঘাটে আসে। কাছেই ছিল বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ বাঁধের ঢালুতে তাঁরা দ্রুত অবস্থান নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। এমন সময় দূরে পাকিস্তানি সৈন্যদের টহল দলকে দেখতে পাওয়া যায়। পাকিস্তানিদের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের আগমনের কোনো খবর ছিল না। রঞ্জু ও তাঁর সহযোদ্ধারা নিঃশব্দে অপেক্ষা করছেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে টহল দল মুক্তিযোদ্ধাদের আওতার মধ্যে চলে আসে। রঞ্জু সংকেত দেন। সঙ্গে-সঙ্গে গর্জে ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র। আকস্মিক এ আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী পর্যুদস্ত হয়। প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে তারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। আশপাশে থাকা পাকিস্তানি সৈন্যরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। দুপুর পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। পাকিস্তানি সৈন্যরা বিপুল ক্ষয়ক্ষতি শিকার করে শেষ পর্যন্ত রণে ভঙ্গ দিয়ে গাইবান্ধার দিকে পালিয়ে যায়। যুদ্ধে ১০-১৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক শহীদ ও তাজুল ইসলাম টুকু নামে একজন মারাত্মকভাবে আহত হন। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুপক্ষের বেশকিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তগত করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা প্রদর্শন ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মো. মাহাবুব এলাহী রঞ্জুকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি লেখাপড়া শেষ করে ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ‘সেন্টার ফর লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ’-এর একজন ট্রাস্টি এবং খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশন, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এসোসিয়েশন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের কার্যকরী কমিটির সদস্য। তাঁর স্ত্রীর নাম ফাতেমা জিন্নাত। এ দম্পতি ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক-জননী। [রেহানা পারভীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!