You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর বিক্রম মো. তাহের আলী

মো. তাহের আলী, বীর বিক্রম (জন্ম ১৯৪৫) অসীম সাহসী ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর জন্ম ১৯৪৫ সালের ৫ই জুন সিলেট জেলার অন্তর্গত গোলাপগঞ্জ উপজেলার হাতিমগঞ্জ ইউনিয়নের কিছমতমাইবাগ গ্রামে। তাঁর পিতা শেখ আবরু মিয়া এবং মাতা হোসনে আরা বেগম।
তাহের আলী পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে নায়েক সুবেদার পদে চাকরি করতেন। ৭১-এ তিনি চট্টগ্রামে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরুর পরপর তিনি বিদ্রোহ করে প্রতিরোধ যুদ্ধে যোগ দেন। এরপর তিনি ১ নম্বর সেক্টরে বিভিন্ন যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। জুলাই মাসে তিনি ‘জেড’ ফোর্সের অধীনে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যুদ্ধ করেন। তাঁর ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক ছিলেন মেজর এ জে এম আমিনুল হক এবং কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন আমীন আহমেদ চৌধুরী ও মো. মোবাশ্বের হোসেন খান। গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে তিনি চট্টগ্রামের কালুরঘাট ব্রিজ, আনোয়ারা থানা, মদিনার হাট, কালোপুল ইস্পাহানি, কালুরহাট সোনালী ব্যাংক, কোর্ট বিল্ডিং-১ থেকে ১২ জেটি পর্যন্ত, কক্সবাজার, চন্দ্রঘোনা, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি বাজার, বন্দুকছড়ি, মহলছড়ি, মইকারী, মহাজন পাড়া, খাগড়াছড়ি, রামগড়, হেঁয়াকো, নারান হাট, শুভপুর, রংপুর জেলার চিলমারী, কুড়িগ্রাম, সিলেটের কয়েলাশ্বর, ফুলতলী চা বাগান, তেলিয়াপাড়া চা বাগান, লাতু, শাহবাজপুর, শেওলা, কানাইঘাট, হরিপুর, সিলেট শহর, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গলসহ আরো অনেক স্থানে পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে সাহসিকতার পরিচয় দেন। এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামের -কালুরঘাট ব্রিজে পাকসেনাদের সঙ্গে এক সম্মুখ যুদ্ধে তিনি গুরুতর আহত হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা তাহের আলীকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি অনারারি ক্যাপ্টেন পদমর্যাদায় উন্নীত হন এবং চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ৩ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী পিয়ারা বেগম। [হারুন রশীদ] মো. তৈয়ব আলী, বীর প্রতীক (১৯৪৪-১৯৯৫) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৪ সালে রাজধানী ঢাকার বাসাবো মাদারটেক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সোনা মিয়া ও মাতার নাম জহুরা বিবি। নিরক্ষর মো. তৈয়ব আলী মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে ঢাকা শহরে ফল ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
মে মাসের শেষদিকে তিনি ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ২নং সেক্টরের অধীন গণবাহিনীর সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। এ সেক্টরের অধীন রাজধানী ঢাকা শহরের মাদারটেক ও আশপাশে বেশ কয়েকটি গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তিনি সুখ্যাতি অর্জন করেন। তন্মধ্যে মেরাদিয়া হাটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গানবোট দখল, তিতাস গ্যাস ফিল্ড অপারেশন, বেরাইদ অপারেশন, ইছাপুর অপারেশন, ত্রিমোহনী অপারেশন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। একবার তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মিলিটারি পুলিশের এক ক্যাপ্টেনকে হত্যা করে তার পিস্তল, ব্যাজেজ অব র্যাংক, সাদা বেল্ট, লাল টুপি, বুট, পাউচ ইত্যাদি গামছায় বেঁধে তাঁর কমান্ডার ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দারকে দেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মো. তৈয়ব আলীকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ৩ পুত্র ও ৩ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম হাজেরা বেগম। মুক্তিযোদ্ধা মো. তৈয়ব আলী ১৯৯৫ সালের ২৪শে ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!