You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক মো. নজরুল হক - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক মো. নজরুল হক

মো. নজরুল হক, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৭) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৭ সালের ১৭ই অক্টোবর তাঁর পিতার কর্মস্থল বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম এ কে এম জহুরুল হক এবং মাতার নাম আমেনা বেগম। নজরুল হক ১৯৬৩ সালে ঢাকা কলেজিয়েট হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৫ সালে তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৬৬ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের এবোটাবাদের কাকুল মিলিটারি একাডেমি থেকে সফলতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে কমিশন প্রাপ্ত হন। তারপর তাঁকে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে পাঞ্জাব রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করে লাহোর সেনানিবাসে পোস্টিং দেয়া হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে নজরুল হক ক্যাপ্টেন পদে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার হিসেবে দিনাজপুরে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট-এর নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ব্যাপক গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করলে তিনি বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি ইপিআর-এর ৬০ জন বাঙালি সদস্য নিয়ে ২৬শে মার্চের পর দিনাজপুরের দশমাইল এলাকায় পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ করেন। তবে প্রাথমিক অবস্থায় তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ না থাকায় তাঁদেরকে পিছু হটতে হয়। দিনাজপুরের কান্তনগরের বনজঙ্গলে দুদিন থাকার পর তিনি তাঁর দল নিয়ে ভারতে যান। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি সীমান্ত দিয়ে আবার দেশে প্রবেশ করেন। তারপর তিনি তাঁর সঙ্গে থাকা ৬০ জন ইপিআর সদস্যসহ ১০০ জনের একটি মুক্তিযোদ্ধার দল গঠন করে খাদেমুল বাশার, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে পুনরায় প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করেন। ১৮ই এপ্রিল তাঁর দল দিনাজপুরের বিরলে অবস্থিত পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরক্ষা ক্যাম্প আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের মধ্যে একটানা পাঁচ- ছয় ঘণ্টা তুমুল গোলাগুলির পর শত্রুসেনারা ঐ ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে সেক্টরভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নজরুল হক ৬ নম্বর সেক্টরের ভজনপুর সাব- সেক্টরের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে তিনি বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার মো. নজরুল হককে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ২৫৭, খেতাবের সনদ নং ৭)। মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি তাঁর কর্মস্থল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১৯৭৪ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন। ১৯৮২ সালে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তারপর থেকে তিনি নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি এক কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মোসাম্মৎ হালিমা বেগম। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড