বীর প্রতীক মো. নাসির উদ্দিন
মো. নাসির উদ্দিন, বীর প্রতীক (১৯৫১-১৯৭৯) নায়েক সুবেদার ও ২নং সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫১ সালে টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার আন্দিবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. গেদু মিঞা ও মাতার নাম রূপজান বেগম। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন বাঙালি
সদস্য। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি কুমিল্লা ক্যান্টমেন্টে ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্তব্যরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি ২নং সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম-এর অধীনে যুদ্ধ করেন। কসবায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। ২৩শে অক্টোবর সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকহানদার বাহিনীর তীব্র যুদ্ধ হয়। এখানকার যুদ্ধে শত্রুবাহিনীর নিক্ষিপ্ত গোলার আঘাতে খালেদ মোশাররফ মাথায় মারাত্মকভাবে আহত হন। তখন মেজর এ টি এম হায়দার ২নং সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তখন থেকে নায়েক সুবেদার মো. নাসির উদ্দিন ক্যাপ্টেন (পরবর্তীতে মেজর) হায়দারের কমান্ডে যুদ্ধ করেন। তাঁর সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন আইন উদ্দিন। অক্টোর মাসের শেষদিকে অধিনায়কের নির্দেশে নাসির উদ্দিন তাঁর দলবল নিয়ে কসবায় পাকিস্তানি ঘাঁটির দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। শত্রুপক্ষের অবিশ্রান্ত গোলাবর্ষণের মধ্যেও নাসির উদ্দিনের অগ্রযাত্রা অব্যাহত ছিল। তিনি একেবারে পাকসেনাদের অবস্থানের কাছে পৌঁছে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের এ অতর্কিত আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। প্রচণ্ড যুদ্ধে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানগুলো একের পর এক ভেঙ্গে পড়তে থাকে। অবস্থান ছেড়ে পাকসেনারা পিছিয়ে যায়। এভাবে তিন ঘণ্টা যুদ্ধ শেষে পাকসেনাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। এ যুদ্ধে নাসির উদ্দিন অসীম সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ২৬ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও ১৮ জন আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে ১১টি এলএমজি, ১টি সিগন্যাল পিস্তল, ৪০টি গ্রেনেড, ৩টি এনারগা গান, ৪৪টি প্লাস্টিক মাইন, একটি ম্যাপ ও দুটি র্যাংক ব্যাজ। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে ৪ জন শহীদ ও ১৫ জন আহত হন। পরদিন পাকসেনারা কসবা পুনর্দখলের চেষ্টা চালায়। কিন্তু নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে পাকসেনাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। কিছু পরে আরো কয়েকটি মুক্তিযোদ্ধা দল সেখানে পৌঁছলে এবং আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে শত্রুরা পুরোপুরি পর্যুদস্ত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নায়েক সুবেদার মো. নাসির উদ্দিনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ২ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম কুলসুম বেগম। ১৯৭৯ সালের ১৪ই নভেম্বর এ বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেন। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড