You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক মো. গোলাম মোস্তফা

মো. গোলাম মোস্তফা, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক (১৯৪৭-২০১৯) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৭ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার মেঘুলা ইউনিয়নের ঝনকি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গোলাম মো. ফালু শেখ এবং মাতার নাম আমেনা আছিয়া খাতুন।
মো. গোলাম মোস্তফা চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৭ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে কর্মরত ছিলেন। সেনাবাহিনীতে চাকরিকালে তিনি পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যনীতি প্রত্যক্ষ করেন। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ভাষণ তাঁর ওপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করে। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর তিনি বাংলাদেশে চলে আসতে সক্ষম হন। ৩০শে মার্চ তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
ছোটবেলা থেকেই মো. গোলাম মোস্তফা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও জেদি প্রকৃতির। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার পর তাঁর পিতা কয়েকবার তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে পিতার সঙ্গে তাঁর একবার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়। তিনি তাকে সাফ জানিয়ে দেন, দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত তিনি লড়াই করবেন। এভাবে তিনি নিজেকে মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ত করেন। এমনকি স্বাধীনতার পর তিনি পিতার সঙ্গে দেখা করা কিংবা পৈতৃক বাড়িতে যাননি। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে তিনি ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে মিলিত হয়ে ভৈরবে পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি ৩নং সেক্টরে এবং এর পরে ‘এস’ ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন।
মো. গোলাম মোস্তফা ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানিতে অবস্থানকালে জানতে পারেন যে, ১৪ই আগস্ট পাকিস্তানের জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানি সৈন্য হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরে সমবেত হবে। পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান উদ্যাপন শেষে তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে যাবে। আলফা কোম্পানির অধিনায়কের নির্দেশ অনুযায়ী পাকিস্তানি সৈন্যদের এম্বুশ করার জন্য রাতের অন্ধকারে মো. গোলাম মোস্তফাসহ ১৫- ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল মাধবপুর উপজেলার গোপালপুরে অবস্থান নেয়। সেখানে সড়কের একটি মোড়ে তাঁরা এম্বুশ করেন। তাঁরা বৃহৎ পরিসরে হানাদারদের আক্রমণের অপেক্ষায় থাকেন।
অনুচরদের নিকট থেকে খবর পেয়ে সকালবেলা পাকিস্তানি সৈন্যরা গোলাম মোস্তফা ও তাঁর সহযোদ্ধাদের তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা পার্শ্ববর্তী খালে অবস্থান নিয়ে গুলি শুরু করেন। পাকিস্তানি বাহিনীও পাল্টা গুলি শুরু করে। কয়েক ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর মুক্তিযোদ্ধারা ধর্মগড়ে পশ্চাদপসরণ করেন।
৬ই ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চান্দুয়ায় পাকিস্তানি সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণের মিথ্যা উদ্যোগ নেয়। আত্মসমর্পণের মুহূর্তে হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গুলি ছোড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের প্রতিরোধ করতে থাকেন। এ যুদ্ধে মো. গোলাম মোস্তফা দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। পরবর্তীতে তাঁর এক পা কেটে ফেলা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মো. গোলাম মোস্তফাকে ‘বীর বিক্রম’ ও ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকরিতে বহাল হন এবং ১৯৭৭ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রী শামীমা আক্তার। তাঁরা ৪ পুত্র সন্তানের জনক। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ১১ই অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। [জগন্নাথ বড়ুয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!