You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর উত্তম মো. জিয়াউদ্দিন আহমেদ

মো. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, বীর উত্তম (জন্ম ১৯৪১) বীর মুক্তিযোদ্ধা, মেজর ও পরবর্তীতে লে. কর্নেল। তিনি ১৯৪১ সালে চট্টগ্রাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. কাশেম এবং মাতার নাম বেগম মজিদা খাতুন। তিনি ১৯৫৯ সালে কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যায় ঝাঁপিয়ে পড়া, মানুষের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পূর্ব বাংলার সর্বত্র শুধু ধ্বংসযজ্ঞ এসব খবর কমবেশি সেখানে অবস্থানকালে তিনি ও অন্যান্য বাঙালি অফিসাররা অবহিত ছিলেন। কীভাবে সেখান থেকে এসে দেশমাতৃকার মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেয়া যায়, সে ব্যাপারে সহকর্মী ও অন্যান্য বাঙালি সেনা অফিসারদের সঙ্গে তাঁরা গোপনে আলাপ-আলোচনা করতেন।
২৫শে জুলাই মেজর তাহের, মেজর মঞ্জুর ও অন্যদের সঙ্গে তিনি অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তান থেকে সপরিবারে পালিয়ে ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসেন। আগস্ট মাসে তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং প্রথম ইস্ট বেঙ্গলের কমান্ড গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর নিয়মিত সম্মুখ যুদ্ধ ছাড়াও গেরিলা পদ্ধতির রণকৌশল গ্রহণ করে প্রথম ইস্ট বেঙ্গলকে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে একটি কার্যকর বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি সক্রিয় হন। তাঁর নেতৃত্বে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল পাকসেনাদের ওপর নিয়মিত আক্রমণ চালাতে থাকে। প্রথম ইস্ট বেঙ্গলের একটি কোম্পানি ১৫ই আগস্ট জামালপুরের কামালপুরে শক্তিশালী পাকিস্তানি শত্রু-অবস্থানে আক্রমণ চালায়। এতে ৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। ৩১শে আগস্ট মুক্তিসেনারা উলিপুর ডাকবাংলোয় বিশ্রামরত এক কোম্পানি পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের নির্মূল করেন। প্রথম ইস্ট বেঙ্গলের খাসিপুর এবং ধানুয়ার অবস্থানে পাকসেনারা আক্রমণ করলে মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণে ৪০ জন পাকসেনা নিহত হয়। পরবর্তীতে মেজর মো. জিয়াউদ্দিন আহমেদ তাঁর বাহিনী নিয়ে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এর মধ্যে ধলই, বিওপি, কানাইঘাট ও .এম সি কলেজের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। ৫ দিনের ভয়াবহ যুদ্ধের পর ধলই হানাদারমুক্ত হয়। ২৬শে মার্চ কানাইঘাটের যুদ্ধে ক্যাপ্টেন মাহবুব শহীদ হন। তবে শেষ পর্যন্ত পাকহানাদাররা পিছু হটতে বাধ্য হয়। কানাইঘাট মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসার পর সিলেট শহরে বিজয় অর্জন সহজ হয়। তাঁর নেতৃত্বে ১৪ই ডিসেম্বর সিলেটের এম সি কলেজের পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পের ওপর আক্রমণ ও তা দখল ছিল অপর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
মহান মুক্তিযুদ্ধে মেজর মো. জিয়াউদ্দিন আহমেদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করে। তাঁর স্ত্রীর নাম জাহানারা বেগম। এ দম্পতি ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক-জননী। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!