বীর প্রতীক মো. ইয়াকুব আলী
মো. ইয়াকুব আলী, বীর প্রতীক (মৃত্যু ১৯৭৮) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার খারেরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবু তাহের ভূঞা এবং মাতার নাম মুক্তাবেন নেসা। তিনি দেলী ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি এবং খারেরা মোহাম্মদীয়া হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। মো. ইয়াকুব আলী তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল)-এ চাকরির মধ্য দিয়ে। তিনি ইপিআর-এর নায়েক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। মো. ইয়াকুব আলী ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে চুয়াডাঙ্গা উইংয়ের দর্শনা সীমান্তে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ করার পরপর তিনি পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। তিনি মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ইয়াকুব আলী বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ যুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেন। তিনি অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কুষ্টিয়ায় পাকবাহিনীর ওপর পরিচালিত আক্রমণে অংশ নেন। এখান থেকে তাঁরা পাকবাহিনীর প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিজেদের দখলে আনতে সক্ষম হন। বিভিন্ন প্রতিরোধ যুদ্ধের পর ইয়াকুব আলী এক পর্যায়ে ভারতে যান। জুন মাসে মেজর হাফিজের নেতৃত্বে তিনি তেলঢালায় জেড ফোর্সের অন্তর্ভুক্ত হন। এ ফোর্সের সৈনিক হিসেবে তিনি গৌহাটির আসাম সীমান্তে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে বীর বিক্রমে লড়াই করেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন এবং সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ইয়াকুব আলীকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (তাঁর গেজেট নম্বর ৪৬২, খেতাবের সনদ নম্বর ২১২)।
মুক্তিযুদ্ধের পর মো. ইয়াকুব আলী বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এ যোগদান করেন। ১৯৭৪ সালে বিডিআর থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি নিজের গ্রামের বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন। তিনি ৩ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম রওশন আরা বেগম। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইয়াকুব আলী ১৯৭৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড