You dont have javascript enabled! Please enable it! কমান্ডার মো. আলতাফ হায়দার - সংগ্রামের নোটবুক

কমান্ডার মো. আলতাফ হায়দার

মো. আলতাফ হায়দার, কমান্ডার (জন্ম ১৯৩৭) বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৩৭ সালের ১৫ই জুন পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলহাজ্ব আবদুল কাদের জোমাদ্দার এবং মাতার নাম মোসাম্মৎ লালবরু বেগম। তাঁর পারিবারিক নাম মো. আলতাফ হোসেন। মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘হায়দার’ উপাধিতে ভূষিত হন।
আলতাফ হায়দার বাবুগঞ্জ উপজেলার বায়লাখালী হাইস্কুলে ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে তিনি পাক- ভারত যুদ্ধে অংশ নেন। সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পরপর ছুটি নিয়ে তিনি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ, পাকবাহিনী কর্তৃক ২৫শে মার্চের গণহত্যা এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর দেশের টানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ফিরে না গিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
২৬শে মার্চের পর এলাকার ছাত্র, যুবক, ছুটিতে আসা এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্যদের একত্রিত করে তিনি নিজস্ব মুক্তিবাহিনী গঠন করেন, যা আলতাফ বাহিনী নামে পরিচিত। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজী কাশেমের সহায়তায় মির্জাগঞ্জের দেউলি, বেতাগীর কাজীরহাট এবং বাউফলের বগায় তিনটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করেন। এ-সকল ক্যাম্পে হাবিলদার আশরাফ আলী, হাবিলদার আবদুল হাই, হাবিলদার আবদুল বারেক প্রমুখ প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধকালে এ তিনটি ক্যাম্পে প্রায় তিন হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। গ্রামে-গ্রামে চাঁদা সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হতো। আলতাফ বাহিনীর সদস্য ছিলেন- নলিনী চক্রবর্তী, নারায়ণ শীল, সৈয়দ দেলোয়ার হোসেন, সামসুর রহমান খান, ফোরকান কাজী, সাদেম আলী হাওলাদার, মতিউর রহমান সিকদার, কাঞ্চন সিকদার প্রমুখ।
মো. আলতাফ হায়দার পটুয়াখালী অঞ্চলের সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী আলী ইমামের সহায়তায় দক্ষিণাঞ্চলের অনেক সম্মুখ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। সেসব যুদ্ধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বামনা থানাযুদ্ধ, পাথরঘাটা থানাযুদ্ধ, মঠবাড়িয়া থানা যুদ্ধ, দেউলির যুদ্ধ, জেলা হানাদারমুক্ত করার যুদ্ধ প্রভৃতি। ২৪শে নভেম্বর বামনা থানা দখলের পরই তিনি যুদ্ধকালীন কমান্ডার এবং ‘হায়দার’ নামে খ্যাত হন। মুক্তিযোদ্ধা সনদও পান এ নামে। মির্জাগঞ্জ উপজেলায় মেহেন্দিয়াবাদ- দেউলি বাজার থেকে উপজেলা পর্যন্ত সড়কের নামকরণ করা হয়েছে কমান্ডার মো. আলতাফ হায়দার সড়ক। ছয় সন্তানের জনক মো. আলতাফ হায়দার বর্তমানে নিজবাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
তথ্যসূত্র: ২০১৫ সালের ৮ই নভেম্বর মো. আলতাফ হায়দারের গ্রামের বাড়িতে গৃহীত তাঁর সাক্ষাৎকার; সুলতানা রাজিয়া রহমান, মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন, এশিয়াটিক প্রকাশনী, ঢাকা ২০০৮ ও অন্যান্য সূত্র

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড