বীর প্রতীক মো. ইব্রাহীম
মো. ইব্রাহীম, বীর প্রতীক (মৃত্যু ২০০৭) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার পাপুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হায়দার আলী মিজি এবং মাতার নাম ছামারফ বানু। তিনি সোনাইমুড়ি প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা করেন।
মো. ইব্রাহীম ১৯৪৯ সালে পাকিস্তান পুলিশে যোগদান করেন। ১৯৫৯ সালে ইপিআর পুনর্গঠিত হলে তিনি এ বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হন এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বপর্যন্ত হাবিলদার হিসেবে ইপিআর-এর দিনাজপুর উইংয়ে কর্মরত ছিলেন। ২৭শে মার্চ সুবেদার শুকুরের নেতৃত্বে অন্য বাঙালি ইপিআর সদস্যদের সঙ্গে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। এরপর তাঁরা বেশ কয়েকটি প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। মো. ইব্রাহীম এসব যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। ৭ই এপ্রিল তাঁরা পাকবাহিনীর পার্বতীপুর ঘাঁটি আক্রমণ করেন। কিন্তু এ আক্রমণ ব্যর্থ হয়। এ-সময় মুক্তিবাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য মূল বাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। মো. ইব্রাহীম তাঁদের একজন। বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর তিনি পায়ে হেঁটে সোনাইমুড়ির নিজবাড়িতে চলে আসেন। পরে আগরতলা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে ২নং সেক্টরে যোগদান করেন। মেজর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে আখাউড়াসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত যুদ্ধে তিনি বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। নবম বেঙ্গল রেজিমেন্ট পুনর্গঠনকালে তাঁকে এ রেজিমেন্টের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কমান্ডিং অফিসার মেজর আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে তিনি ‘কে’ ফোর্সের অধীনে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নেন। আখাউড়া এলাকার এক যুদ্ধে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এ যোগদান করেন এবং ১৯৮৫ সালে অবসরে যান। অবসর জীবনে তিনি স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে ব্যাপৃত রাখেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার মো. ইব্রাহীমকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৪৪৩, খেতাবের সনদ নং ১৯৩)। ব্যক্তিজীবনে তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম ছলেমা বেগম। তিনি ২০০৭ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড